× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এক দৌড়ে আপনার কাছে চলে যাবো

সেরা চিঠি


১ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার

আব্বা,
তখন বেশ ছোট আমি। ২০০৮ সাল। ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো একদিন আপনি আমাদেরকে রেখে বিদেশে পাড়ি জমান। আপনার পরনে সাদা শার্ট, কালো সু। হাতে ছিল সবুজ রঙের ট্রাভেল ব্যাগ। আপনার বিদেশে যাওয়ার দিন আমার খুব একটা মন খারাপ হচ্ছিল না। অত কিছু তো বুঝতাম না। সেদিন বাড়িতে অনেক মেহমানও এসেছিল আপনাকে বিদায় জানাতে।

এতো মানুষ দেখে আমার অনুষ্ঠান-অনুষ্ঠান ভাব লাগছিল। কিন্তু আপনি চলে যাওয়ার পর, দিন যতই যেতে লাগলো ততই বুঝতে পারলাম, আপনি কাছে থাকাটা কী, আপনি মানে কী।
যাওয়ার সময় আপনি বড় বোনকে দিলেন একটি ডায়েরি। ভাইকে হাতঘড়ি। তা দেখে আমার মন খারাপ হলো বেশ। আরে! আব্বাতো সবাইকে সব দিয়ে দিলো। আমাকে তো কিছু দিলো না! অভিমান নিয়ে আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে। আপনি কাছে এলেন। বললেন, আম্মাজান আপনাকে কি দিবো? আমি চুপ করে থাকলাম। পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে আমার হাতে দিলেন। বললেন, এটা রেখে দিও।
মনটা তবুও আমার খারাপ। সবাইকে এত ভালো গিফট আর আমাকে শুধু রুমাল! একটু পরেই আপনি আমাকে আটশো টাকা বের করে দিলেন। আমিতো খুব খুশি।
আজ ১৩টা বছর হতে চললো। আপনি সেই বিদেশেই থাকলেন। আপনার দেয়া রুমাল আজও কাছে রেখে দিয়েছি। যদিও টাকাটা খরচ করে ফেলেছিলাম।
আমি বড় হতে থাকি। স্কুল পেরিয়ে কলেজ। দিন যতো যায়, আপনার প্রয়োজনটা তত বেশি অনুভব করতে থাকি। শক্ত অভিভাবক নেই।
দেশে থাকতে আপনি যখন বাইরে থেকে বাড়ি আসতেন, গেটে ঢুকেই ডাক দিতেন। ‘আম্মাজান, আম্মাজান!’
অমনি আমি আপনার কাছে চলে যেতাম। আমাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতেন। গল্প করতেন। কত রকমের যে গল্প! আমি চুপ করে শুনতাম। আপনার শরীরের সে গন্ধ আজও আমি অনুভব করি। পৃথিবীর মানচিত্র চেনাতেন। গল্প করতেন- ভূগোল আর ইতিহাস নিয়ে।
এখনো বিদেশ থেকে আপনি ইতিহাস নিয়ে গল্প করেন।
আব্বা, আপনি অনেক কিছুই জানেন না। সেই ছোট বেলায় তো আপনি আমাকে রেখে গেছেন। কেউ কিছু বললে, ধমক দিলে, মন খারাপ হতো। চোখের কোনে পানি জমতো। যদি আপনি কাছে থাকতেন!
এই ভেবে সান্ত¡না দিতাম নিজেকে। একদিন তো আপনি দেশে ফিরবেনই
এখন আমি বিবাহিতা। বিয়ের সময় আপনি ছিলেন না। আমি কখনো ভাবতে পারিনি, জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনি থাকবেন না। আমার সম্প্রদান আমার আব্বাই করবে। এমনটাই ভাবতাম। কিন্তু হলো না যে!
কত কথা যে বছরের পর বছর জমে আছে আপনাকে জানানো হয়নি। তার কিছু জানলে আপনি হয়তো বলতেন- আম্মাজান আমি আছি তো, এতো ভাবনা কিসের!
যতদূর মনে পড়ে, আপনি কখনই আমাকে মারপিট করেননি। বকাও দেননি। যে মানুষ এতো মায়া নিয়ে ‘আম্মাজান’ ডাকে সে মানুষ কি বকা দিতে পারে! সামনা-সামনি ‘আম্মাজান’ ডাকটা কতদিন যে শুনিনি!
২০০৮ থেকে ২০২১। এখনো রোজ মনে হয়, আপনাকে খুব প্রয়োজন আব্বা। আপনার অভাব বোধ করি সকাল-বিকাল।
সুস্থ শরীরে আপনার ফেরার অপেক্ষায় আছি। আপনি এসে সবার আগে আমাকে ডাকবেন- আম্মাজান!
আমি এক দৌড়ে আপনার কাছে চলে যাবো।
ইতি
আপনার আম্মাজান

তাসনিমা রহমান।
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর