× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমি কী চাইলেই তোকে বাঁচাতে পারতাম?

সেরা চিঠি

পিয়াস সরকার
২ জুলাই ২০২১, শুক্রবার

সুহা। তুই আজ দুনিয়ায় নেই। তোর চলে যাওয়ার নয় নয়টা বছর হয়ে গেছে। এই নয় বছরে কতোই না পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বটা বদলে গেছে। বদলে গেছি আমিও। তুই যেমন চাইতি তেমনটা আজও হতে পারিনি। আজও পাগলামো করি।
অদ্ভুত হাসিটা আজও দেখে সবাই। হাসি-খুশি মানুষটার জীবনে একটা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে ফিরি। আমি কী তোর মৃত্যুটা ঠেকাতে পারতাম?

প্রিয় রংপুর শহর। কতোই না স্মৃতিবিজড়িত। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর আরও বাউণ্ডুলে। আমার জন্য তোর কতোই না চেষ্টা। আর তোর স্বভাবসুলভ হাসিমাখা মুখে বলা- মানুষ হবি না তুই?

জানি না মানুষ হয়েছি কিনা? অন্যদের মতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারিনি। জানিসই তো লেখাপড়াটা কোনো কালেই মনে ধরতো না। যাক আমি আজ সংবাদকর্মী। হ্যাঁ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার না হলেও শখের কাজটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। তোর খুলে দেয়া ফেসবুকটাই চালাই কিন্তু হায় তুই শুধু নাই বন্ধুদের তালিকায়। সেই যে রাগের মাথায় আনফ্রেন্ড করলি। দুনিয়া ছেড়েই চলে গেলি রিকোয়েস্টটা ঝুলিয়ে রেখেই।

আমি সাংবাদিক হয়েছি- এটা যেমন জানিস না। তেমনি দৃষ্টি আজ ডাক্তার, যুথি পাক্কা সংসারী। তারা দুজনই সুখী। তোদের দেয়া স্মৃতিময় চিঠিটাও আজও আমার সংগ্রহে আছে। দুদিন পর আমিও বিয়ের পিঁড়িতে বসবো। দৃষ্টি, যুথির মতো আমার বিয়েতেও আসবি না তুই।

যাক তোকে বলে রাখি, যেদিন তোর মৃত্যু হলো- সেদিন আমি সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছিলাম। হাত-পা ছিলে বাড়িতে এসে শুনি তোর মৃত্যু সংবাদ। যখন শুনেছি তখন তুই কবরে। ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া হয়নি শেষ দেখা করতে। আর আমার মনের অবস্থা কী হয়েছিল সেটা না হয় নাই বললাম।

কি ছিল তোর দুঃখ? কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলি। মেডিকেলে পড়ার সুযোগ তো কতো মানুষই পায় না। এটাই কি কারণ- নাকি তোর ভালোবাসার মানুষের কাছে ব্যথা পেয়েছিলি? উত্তরটা খোঁজা হয়নি। চলে যাবার আগে আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারলি না? আমার খারাপ সময়ে পাশে থাকলি, তোর খারাপ সময়ে আমাকে জানালিও না। আমিও তোর ওপর রাগ করে স্বার্থপরের মতো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আজও প্রশ্নটা কুরে কুরে খায়- আমি কী চাইলে তোকে বাঁচাতে পারতাম? আমার বিশ্বাস পারতাম। কিন্তু হায় যোগাযোগটাই যে হলো না।

যাই হোক যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস। তুই সৌভাগ্যবান, অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছিলি। সবার স্মৃতিতে বেঁচে আছিস আজও। থাকবি আজীবন।

সুহা চলে গেছে। জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসবেই। এই খোলা চিঠিটা যারা পড়ছেন তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ- আত্মহত্যা করার আগে আরেকবার ভাবুন। আপনার বাবা, মা, সন্তান, স্ত্রী, ভাইবোন, বন্ধুসহ প্রিয়জনদের কথা। আর সমস্যায় সমাধানের পথ খুঁজুন। পালিয়ে যাওয়ার থেকে যুদ্ধ করুন। সমাধান আসবেই।

ইতি
তোর বাউণ্ডুলে বন্ধু
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর