× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গুম, নিখোঁজ নাকি আত্মগোপন? ফেরার পর মুখ বন্ধ

মত-মতান্তর

আবদুল বাকী, লন্ডন
২ জুলাই ২০২১, শুক্রবার

অভিযোগ আছে কখনো সাদাপোশাকে, আবার কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায়। পরে কারও কারও লাশ পাওয়া যায়, একেবারেই নিখোঁজ রয়েই যায় অনেকে। কেউ ফিরেও আসে। কিন্তু ফেরার পর মুখ খোলেনা কেউ। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে কেন বা কারা ঘটায় এসব ঘটনা? এসব গুম, নিখোঁজ নাকি আত্মগোপন?

সম্প্রতি ইসলামী বক্তা আবু ত্ব হা মোহাম্মদ আদনান তার তিন সঙ্গীসহ নিখোঁজ হবার এক সপ্তাহ পর তাদের পাওয়া যায় নিজ নিজ বাড়িতে। পুলিশের দাবি, আবু ত্বহা বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। তবে নিখোঁজের পর ফিরে আসলেও নিজ থেকে চারজনের কেউই কী ঘটেছিল এখন পর্যন্ত সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি।

বিগত দিনগুলোতে এরকম নিখোঁজ হবার ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক নিখোঁজের ৩৪ ঘণ্টা পর তাকে চোখবাঁধা অবস্থায় কে বা কারা মিরপুরে নামিয়ে দিয়ে যায়।
৫৩ দিন পর বেনাপোলে ভারত সীমান্তের কাছে পাওয়া যায় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে, ২১ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ ৬২ দিন পর ভারতের মেঘালয়ের শিলং থেকে উদ্ধার হন। রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ, তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে।

তবে ফিরে আসার পর নিখোঁজ ব্যক্তিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বলেন, চোখ বেঁধে তাদের মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর বাইরে তারা কেউ আর বিস্তারিত কিছু বলেন না। এদিকে নিখোঁজের পর আর ফিরে আসেনি এমন গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একটা বড় অংশ রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এর মধ্যে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যারা আর ফিরে আসেননি, তাদের পরিবারও রয়েছে নানা সমস্যায়। আতংকে কাটে তাদের প্রতিটা দিন- এ কথা জানান ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদী লুনা। শুধু বিরোধী রাজনীতির না গুমের শিকার হয়েছেন খোদ সরকার দলীয় নেতাকর্মীও।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেক পরিবারের অভিযোগ তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সহযোগিতা পান না। কোনো কোনো সময় দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর অনেকে ফিরে আসেন। অন্তর্ধানের সময়টুকুর কথা তাদের মনে পড়ে না। সে সম্পর্কে তারা কিছুই বলতে পারেন না। ফিরে আসার পরে পরিবারগুলোর তরফ থেকে আইনগত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো তদন্ত করতে দেখা যায় না।

সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় এ দাবি করা হয় যে, দেশে কোনো ধরনের গুমের ঘটনাই ঘটে না। কিন্তু দেশের এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলে আসছে, বাংলাদেশে গুমের ঘটনা অব্যাহত।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুয়ায়ী গত ১৩ বছরে (২০২০ সালের আগষ্ট পর্যন্ত) নিখোঁজ হওয়া ৬০৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন। অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনো তথ্য নেই পরিবারের কাছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দিতে পারছে না কোনো তথ্য। এর মাধ্যমে সমাজে একটি ভয়ার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, বলছেন মানবাধিকার কর্মী নুর খান। তিনি আরও জানান, এসব কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজনীতির বাইরেও ঘটছে এমন অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা। তারা সবাই পরে ফিরেও এসেছেন। তবে এসব ঘটনার কোন কিনারা পাওয়া যায়নি এখনো।

অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত খুন ও হেফাজতে নির্যাতন ও ন্যায়বিচারের সুযোগহীনতার মতো বিষয়গুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের নৃশংসতা ও চরম অপরাধগুলোর অন্যতম। বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত হয় না, বরং পরস্পর সম্পৃক্ত; একটি অপরটিকে প্রভাবিত করে এবং চূড়ান্তভাবে আইনের শাসনকে বিপন্ন করে তোলে।  

মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলছেন, ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য গুমকে একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষ আগে যেমন হোটেল, রেস্টুরেন্টে, বাসে, ট্রেনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো, তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিলো রাজনৈতিক পরিম-ল নিয়ে, রাজনৈতিক কর্মকা- নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এমন কোনো আলোচনা হতে দেখি না। তার একটা বড় কারণ হচ্ছে গুমের মত ঘটনা এমন একটা অবস্থায় মানুষকে নিয়ে গিয়েছে মানুষ আর এখন নিজেকে নিরাপদ ভাবছে না।

আইনজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন, যদি কারো ফেসবুক স্ট্যাটাস বা কর্মকা-ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকার বিব্রত হয়, তাহলে তাকে সতর্ক করা কিংবা তাকে শাস্তি দেয়ার আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিকের বিরুদ্ধেই মামলা হতে পারে এবং তার দল ও মত যাই হোক, তার বিচারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এমনকি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদেরও আইন রয়েছে। কিন্তু এরপরও কেন মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে সেটা অবশ্যই ভেবে দেখা দরকার।  

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী রিয়াজুল আলম বলেন, ‘নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। নিখোঁজের কোনো অভিযোগ আসামাত্র তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। নিরপেক্ষভাবে তার তদন্ত করতে হবে। ভিকটিম পরিবারকে তার স্বজনের অবস্থানের বিষয়ে জানাতে হবে।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর