× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আবু ত্ব-হা'র নিখোঁজ, ফিরে আসা ও কিছু প্রশ্ন

মত-মতান্তর

আরিফ হোসেন
১০ জুলাই ২০২১, শনিবার

গত ১০ই জুন গভীর রাতে একজন তরুণ— মো. আফছানুল আদনান, যিনি আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান নামে পরিচিত তিনি গাড়িচালক ও অপর দুই সঙ্গীসহ নিখোঁজ হন।  ঘটনার ৮ দিন পর ফিরে এলেও তারা কিছুই জানান নি। আইনশৃংখলা বাহিনী জানান, এসময় তিনি গাইবান্ধায় তার এক বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। কেন নিখোঁজ ছিলেন আবু ত্ব-হা? কেউ কি আসলেই জানতো না তার অবস্থান?ফিরে আসার পর গণমাধ্যমকে কিছুই জানান নি তারা। এমনকি তার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেয়া হয় নি।

 এ ধরনের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সংবাদ কেন উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দেয়, তা সবিস্তারে বলা দরকার নেই। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় দাবি করা হয় যে, বাংলাদেশে কোনো ধরনের গুমের ঘটনাই ঘটে না। কিন্তু দেশের এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলে আসছে, বাংলাদেশে গুমের ঘটনা অব্যাহত।
 
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১১ জন গুম হয়েছেন।
গত বছরের আগস্ট মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য ছিল, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন।

২০১৯ সালের এপ্রিলে ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের (এফআইডিএইচ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, গুমের এ ঘটনাগুলো বিক্ষিপ্ত বা স্বেচ্ছায় ঘটেনি।

ঘটনাগুলোকে ‘নিয়মতান্ত্রিক’ ও ‘রাষ্ট্রীয় নীতিমালার পরিণাম’ হিসেবে বর্ণনা করে এফআইডিএইচ বলেছে, ‘যেহেতু বেশির ভাগ ভুক্তভোগীকেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে টার্গেট করা হয়, এই কাজগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ।’ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এসব অভিযোগ মিথ্যা হলে তা প্রমাণ করার জন্যই তদন্তের অনুমোদন দেওয়া।

আদনানের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সংবাদে আমাদের এ তথ্যগুলো স্মরণে আসে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, তার মা আজেদা বেগম একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘আজেদা বেগম বলেন, আদনান কোনো রাজনীতি বা ধর্মীয় সংগঠনও করেন না।’ এ কথাগুলো লক্ষণীয়। জননী হিসেবে তিনি সত্য বলেছেন। আমরাও ধরে নিচ্ছি যে, অনলাইনে ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিত আদনান কোনো ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু একজন জননীকে, নিখোঁজ সন্তানের ব্যাপারে এ পরিচয় দিতে হচ্ছে যে, তিনি রাজনীতি বা সংগঠন করেন না। তাহলে বাংলাদেশের নাগরিকের রাজনীতি বা সংগঠন করা কি অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে?

এ ধরনের কথা মা-বাবাকে বলতে হচ্ছে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই। অনেকের স্মরণে থাকবে, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা যখন আটক হন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনেও বলা হয়েছে, তারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।

এ আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের মা ও স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘রাশেদ কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না।’ একজন অসহায় মা তার সন্তানের মুক্তির জন্য আবেদন জানাতে দুই হাত জোড় করে বলেন, ‘আমার মণি, এমনকি আমরা কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না।’ (বাংলা ট্রিবিউন, ১১ জুলাই ২০১৮)। তারই প্রেক্ষাপটে আমার প্রশ্ন ছিল ‘তরুণদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা কি অপরাধ?’ (প্রথম আলো, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮)।

বাংলাদেশে ভিন্নমতের মানুষ আটক হওয়ার খবরে ওই ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি তোলার মতো ব্যক্তি আছেন। তারাই আবার কথায় কথায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনেক নজির দেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ যে কেবল একটি বা দুটি মামলার রায় নয়, কিংবা বললেই যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না, সেটা তাদের বোঝানো অসম্ভব।

আশা করি, এখনও  যারা ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন, তারা ফিরে আসবেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ, তারাও ফিরুক স্বজনদের কাছে—সেটাই প্রত্যাশা। সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, আশাবাদ কোনো কৌশল হতে পারে না। নাগরিকদের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার যে ধারা গড়ে উঠেছে, তার পেছনে যে রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থা আছে, তাকে মোকাবিলা না করে কেবল আশাবাদ দিয়ে এ প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না।

লেখক: সাংবাদিক (নিউইয়র্ক, আমেরিকা থেকে)।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর