ঢালারপাড় নিয়ে সব ক্ষোভ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে। স্থানীয়দের দাবি- কালাসাদেক মৌজার ইজারাদার পক্ষ লিজ বহির্ভূত এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার বালু লুট করছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে ঢালারপাড়সহ কমপক্ষে ১০টি এলাকা। ভাঙনের মুখে পড়েছে বসতবাড়িও। এ নিয়ে ঢালারপাড়ের ক্ষুব্ধ মানুষ মানববন্ধন করেছে। প্রশাসন বলছে- লিজ বহির্ভূত এলাকায় নৌকা দিয়ে পাথর লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ খনিজ সম্পদে ভরপুর এলাকা। পাথরের সাম্রাজ্য কোম্পানীগঞ্জে বালু নিয়ে গত ৪ বছর ধরে নানা ঘটনা ঘটছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে প্রশাসনের তরফ থেকে ইজারা দেয়া হয় বালু মহাল। কিন্তু ইজারাদাররা কখনো নিজের মহালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তারা অবাধে লুটপাট চালান কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে। এবার কোম্পানীগঞ্জের কালাসাদেক মৌজা লিজ নিয়েছেন সিলেটের প্রদীপ কুমার দে। তার সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের পাথর ও বালু ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। প্রদীপ কুমার দে জানিয়েছেন, তারা কালাসাদেক মৌজার লিজকৃত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন। লিজের বাইরের এলাকা থেকে বালু উত্তোলন হলেও তারা ওখান থেকে রয়্যালিটি আদায় করেন না। স্থানীয়দের একটি পক্ষ লিজ গ্রহীতাকে হয়রানি করতে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন- ঢালারপাড় মৌজার ঢালার মুখ পর্যন্ত ইজারাদারদের সীমানা। এর বাইরের অংশে প্রতিদিন ২শ’ থেকে আড়াইশ’ নৌকা বালু উত্তোলন করছে। প্রতিটি নৌকায় একেকটি লিস্টার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব নৌকায় ৪ টাকা ফুট হারে বালু বিক্রি করা হয়। একেকটি নৌকায় ৪ থেকে ৫ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হয়। এসব বালু উত্তোলনের ফলে ঢালারপাড়ের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। লিস্টার মেশিনের শব্দে এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত। পাশাপাশি নদী তীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়িও ভাঙনের মুখে পড়েছে। ফলে এই অবস্থায় গোটা ঢালারপাড় এলাকায়ই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঢালারপাড় ও এর আশপাশ এলাকা থেকে জোরপূর্বক অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ধলাই নদী ও ডালাই নদের ভাঙনের সৃষ্টি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। গত শুক্রবার ঢালারপাড় এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে উত্তর ডালারপার, ঢালারপাড়, মেঘারগাঁও, মোস্তফা নগর, দক্ষিণ ডালারপারসহ অনন্ত ১০টি গ্রামের লোকজন অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল ঢালারপাড় এলাকায় ইজারাকৃত বালু মহালের বাইরে গিয়ে জোরপূর্বক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ২নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের ৬টি গ্রাম, ঢালারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢালারপাড়-মেঘারগাঁও দাখিল মাদ্রাসা, আরও একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা এখন নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কিছু সদস্যকে মেনেজ করে এলাকার চিহ্নিত বালুখেকোরা বালু উত্তোলনের কারণে এই এলাকাটিই এখন বিলীন হওয়ার পথে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢালারপাড়-মেঘারগাঁও দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আরিফুল হক সেন্টু। ২নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ মতিনের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ২নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ঢালারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এডভোকেট ইসরাফিল আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, ২নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শান্তি মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও আলী আকবর মেম্বার প্রমুখ। এদিকে, কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিজ বহির্ভূত এলাকায় বালু উত্তোলন করায় অভিযান চালানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছেন। এই অভিযানে মামলা দায়ের করা ছাড়াও জরিমানা আদায় করা হয়। তবে, ইজারাদার পক্ষের লোকজনের দাবি- ঢালারপাড়ের আলম মেম্বার, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ কয়েকজন নিজেদের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলন করেন। এরপর ওই উত্তোলনের টাকাও তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। নিজেরা বালু উত্তোলনের পর্ব শেষ করার পর এখন ইজারা অংশকে হয়রানি করতে আন্দোলনে নেমেছেন। বিষয়টি সিলেটের প্রশাসনকে ইজারাদার অংশের পক্ষ থেকে অবগত করা হয়েছে।