করোনায় বিপর্যস্ত সিলেট। ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। করোনার লাগাম টেনে ধরতে সিলেটে শুরু হয়েছে গণটিকা কার্যক্রমও। আর এতে সাড়া মিলছে বিপুল। প্রথম দফায়ও ব্যাপক সাড়া ছিল। কিন্তু টিকা সংকটের কারণে সেই কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। গত শুক্রবার সিলেটের প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ ও সুধীজনের সঙ্গে করোনার ঊর্ধ্বগতি রোধ নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ওই বৈঠকে তিনি সিলেট নগরে আরও ১০টি স্থানে টিকা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেন।
একইসঙ্গে মন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, সিলেটে টিকার সংকট হবে না। মন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গত রোববার সিলেটে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকার চালান এসে পৌঁছেছে। তবে, এই টিকা সিলেটে আসার আগেই গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে গণটিকা কার্যক্রম চালানো হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় টিকা কার্যক্রম শুরু করা হয়। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিলেটে রোববার এসেছে ৬৪ হাজার ২শ’ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। এরমধ্যে মডার্নার টিকা ১৯ হাজার ২শ’ ডোজ ও চীনের তৈরি সিনোফার্মের ৪৫ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে। টিকা হাতে আসার পর কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে নগরে আরও ৯টি টিকাদান কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে টিকা কেন্দ্রগুলোর। বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট জেলা পুলিশ হাসপাতালে টিকা শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে জানা গেছে- ৩ দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নতুন ৯টি কেন্দ্রে টিকাদানের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- নগরভবন (সিলেট সিটি কর্পোরেশন) ধোপাদীঘিরপাড়স্থ সীমান্তিক পরিচালিত বিনোদনী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চৌহাট্টাস্থ মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল, কাজীটুলার সূর্যের হাসি ক্লিনিক, টিলাগড়ের সূর্যের হাসি ক্লিনিক, ৮নং ওয়ার্ডের বীরেশ চন্দ্র নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাগবাড়ী বর্ণমালা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২৬নং ওয়ার্ডের কদমতলী নতুন বাস টার্মিনালের পাশের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চালানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। টিকার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন পেলেই এসব কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে নতুন এই ৯টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান শুরু হবে। এই কেন্দ্রগুলোকে অ্যাপসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অ্যাপসে এলেই তখন কেন্দ্রের টিকা রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। প্রয়োজন হলে ৯টি কেন্দ্রেই একযোগে টিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি জানান, করোনার ঊর্ধ্বগতি রোধে টিকা ছাড়া এই মুহূর্তে বিকল্প কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং টিকা কার্যক্রমকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ৯টি টিকা দান কেন্দ্র অনুমোদন পেলে মোট ১১টি কেন্দ্রে সিলেটে টিকা কার্যক্রম চলবে।
করোনায় আরও ৫ মৃত্যু: সিলেটে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। গতকাল সিলেটে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন শনাক্ত হয়েছে আরও ৩৭৫ জনের। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ৫ জনের মধ্যে ২ জন সিলেটের। শনাক্ত হওয়া ৩৭৫ জনের মধ্যে সিলেটের ২০২ জন রয়েছেন। আর একই সময়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২৯৩ জন। গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ১২ জুলাই পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় ৫২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন সিলেট জেলায়। এ জেলায় করোনায় ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৩৯, হবিগঞ্জে ২৩ ও মৌলভীবাজারের ৪০ জন রয়েছেন। নতুন আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে সিলেট জেলার ২০২, সুনামগঞ্জের ৪৪, হবিগঞ্জের ৪০, মৌলভীবাজারের ৩০ ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়।