× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পোলাও-কোরমা খেয়ে আমরা জামাতে মরার প্রস্তুতি নিচ্ছি

ফেসবুক ডায়েরি

হাসান তারেক চৌধুরী
১৪ জুলাই ২০২১, বুধবার

“We’ve dressed up in our best and are prepared to go down like gentlemen.” - আমরা যতটা সম্ভব সুন্দরভাবে নিজেদের সাজিয়েছি, এবং একজন ভদ্রলোকের মতো ডুবে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছি।“

ডুবে মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে কথাটি বলেছিলেন, টাইটানিকের একজন অভিজাত যাত্রী, বেনজামিন গুগেনহেইম। অনেকেই এটিকে আভিজাত্যের অহংকার হিসেবে ধরে নিলেও, বেশিরভাগ মানুষই একে বীরত্বসূচক উক্তি বলেই মনে করেন। সে যাই হোক, এই উক্তিটি আজ আমার মনে হলো এসব কারণে না, অন্য একটা কারণে। কোভিডের সূচনার পর দেশ যখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে, ঠিক তখনই দেখলাম এক সরকারী প্রজ্ঞাপন - কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এবং বিপণী বিতান খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যথাসম্ভব সাজগোজ করে, গরু-ছাগলের মাংস ও পোলাও-কোরমা খেয়ে আমরা জামাতে মরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

অনেকেই হয়তো আমার উপর ভীষণ রেগে যাবেন। বুলি কপচাবেন, গরীবের পেটে খাবার না থাকলে তারা লকডাউন মানবে না। খুব সত্যি কথা, অনেকবার বলা হয়েছে এটা।
কিন্তু এই সত্যি কথার আড়ালেও আরেকটি সত্যিও আছে। যেখানে ১৫ থেকে ২০ দিন কারফিউয়ের আদলে লকডাউন দিলেই এই মহামারী অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, আমরা সেটা না করে কেন বারবার অর্থহীন লকডাউন আরোপ করে যাচ্ছি? দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ এখন আমাদের দেশে, নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু করছি, বিদেশি সহায়তা সহ মেট্রোরেল, নদীর নিচে টানেল সহ নানাবিধ কর্মকান্ড চালাচ্ছি, তারা কি ১৫-২০ দিন দেশের এই দরিদ্র জনগণের মুখে খাবার তুলে দেয়ার যোগ্যতা রাখিনা? নিশ্চয় আমাদের সেই যোগ্যতা আছে, শুধু পরিকল্পনার অভাব। কেন বলছি একথা? ব্যাখ্যা করছি।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে এদেশের মানুষের শতকরা ২০.৫ দরিদ্র সীমার নিচে এবং শতকরা ৩৭-৪০ ভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত আয় সীমায় অন্তর্ভূক্ত । তবে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মিলে প্রান্তিক সীমার আশেপাশে বা নিচে আছে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ, ১৫-২০ দিনের কঠোর অবরোধে এই ৪০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৬.৫ কোটি মানুষই খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে পড়তে পারে।  
এবার আসা যাক, এই ৬.৫ কোটি মানুষকে ১৫ দিনের খাদ্য সহায়তা দিতে কত টাকা প্রয়োজন পড়বে?

- গড়ে ৪ জন মানুষে একটি পরিবার ধরলে ৬.৫ কোটি মানুষে গড়ে ১.৬৩টি পরিবার হয়। -
- প্রতিটি পরিবারকে (৪ জন হিসেবে) ১৫ দিনের জন্য ৫,০০০ টাকা করে নগদ বা সমমূল্যের খাদ্য সহায়তা দিলে, মোট খরচ ৮,১৫০ কোটি টাকা।
- আমাদের দেশে বিতরণ ব্যয় সামান্য বেশি। তাই, ধরে নিলাম এই ৮,১৫০ কোটি টাকা বিতরণের জন্য আরও ৮,১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তাহলে, মোট দরকার হবে ১৬,৩০০ কোটি টাকা।

আপনার মনে হতে পারে, এটা অনেক অনেক টাকা। কিন্তু তাই কি?

যে দেশে স্বল্প পরিচিত একটি মাত্র সাধারণ প্রতিষ্ঠান তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার সংবাদে দায়িত্বশীল কেউ কেউ বলেন এটা তেমন কোনো বড় ব্যাপার না। সেখানে রাষ্ট্রের পক্ষে ১৬,৩০০ কোটি টাকা তো কোনো টাকাই না! এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, কোভিডের প্রথম ওয়েভে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে সহায়তা দেয়া হয়েছিলো মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

এই সহায়তা কাদের দেয়া হয়েছিলো? উত্তর আমরা সবাই জানি - ব্যবসায়ীদের।  

এবার প্রশ্ন করা যেতে পারে, তাহলে শিল্প মালিকদের কী হবে? এর উত্তর হলো, মাত্র ১৫ দিন লকডাউন থাকলে যে মালিকেরা তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকারের কাছে হাত পাতে, তারা নিজেরাও আসলে সম্পূর্ণ দেউলিয়া অবস্থায় আছে। তাই, সরকার যখন এইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের খ্যদ্য সহায়তা পাঠাবে, দেউলিয়া হিসেবে তাদেরকেও সমমূল্যের কয়েক বস্তা ত্রাণ-সামগ্রী পাঠিয়ে দিলেই চলবে।

আসল বিষয় হলো প্রায়োরিটি। প্রথম প্রায়োরিটি মানুষের জীবন, তারপর খাদ্য, তৃতীয় বাসস্থান। তাই প্রথমেই মানুষের জীবনের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় যা কিছু করা দরকার, তাই করতে হবে। তারপর বাসস্থানের ব্যবস্থা। অবশ্য এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হস্তান্তরের আগেই উপহারের সেই ঘর ভেঙে না পড়ে, অথবা রাতের আঁধারে জ্বীন এসে গায়েব না করে দেয়। তারপর না-হয় অন্য উন্নয়ন হবে -  আমরা তখন মনের সুখে উড়োজাহাজে বা সাবমেরিনে চড়ে রেশন তুলতে যাবো।

[হাসান তারেক চৌধুরী বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক। লেখাটি তার ফেসবুক থেকে নেয়া]
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর