পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় করোনা পরিস্থিতির চলমান নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকার প্রদত্ত ওএমএস কার্যক্রমে কোনো স্বচ্ছতা নেই। দুস্থদের জন্য নির্ধারিত ৩০ টাকা মূল্যের চাল, ১৮ টাকা মূল্যের আটা নামমাত্র বিক্রি করছে। আর সিংহভাগ কালোবাজারে বিক্রি করছে ডিলাররা। বর্ষার অজুহাতে ওএমএস কমিটি ও তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলায় দুস্থ মানুষ ন্যায্যমূল্যের খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলেও লাভবান হচ্ছে ডিলাররা। এতে দুস্থদের জন্য সরকারের মহতী উদ্যোগ ভেস্তে গেলেও পার পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা।
সংক্রমণ নিষেধাজ্ঞায় কর্মবিমুখ হয়ে পড়া দুস্থ মানুষের জন্য সরকার ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে সারা দেশে ২৫শে জুলাই থেকে নির্ধারিত স্পটে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চাল, আটা বিক্রির উদ্যোগ নেয়। যা আগামী ৭ই আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকবে। এতে কলাপাড়া পৌরসভায় চারজন ও কুয়াকাটা পৌরসভায় তিনজন ডিলার ওএমএস’র খাদ্যসামগ্রী বিক্রি শুরু করে।
প্রতি ডিলারকে দুস্থদের খাদ্য কার্যক্রম পরিচালনায় নির্ধারিত মূল্যের চালান ব্যাংকে জমা নিয়ে ভর্তুকি দিয়ে প্রতিদিন ১ দশমিক ৫ টন চাল ও ১ টন আটা সরবরাহ করা হয়। যার সিংহ ভাগ তারা খাদ্য গুদাম থেকে ছাড় করার সময় নির্ধারিত ব্যবসায়ীদের কাছে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। কেননা খাদ্যগুদাম থেকে ছাড় করার পর থেকে ডিলারদের দোকানে নির্ধারিত পরিমাণ চাল, আটা পৌঁছে কিনা বা সঠিক পরিমাণ দুস্থদের মাঝে বিক্রি হচ্ছে কিনা- এ নিয়ে খাদ্য গুদাম, খাদ্য অধিদপ্তর, তদারকি কর্মকর্তা, ওএমএস কমিটি কারও কোনো তদারকি নেই। এমনকি জবাবদিহিতা নেই কারও।
এদিকে কুয়াকাটা পৌরসভার ডিলার মো. আলমগীর, মো. ইসমাইল ২৫ ও ২৬শে জুলাইয়ের বরাদ্দকৃত ১০ টন চাল, আটা খাদ্য গুদাম থেকে ছাড় করলেও বিক্রি করেনি। ২৭শে জুলাই দু’জনের বরাদ্দকৃত ৫ টন চাল, আটা তারা নামমাত্র বিক্রি করে দুস্থদের মাঝে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে কুয়াকাটা প্রেস ক্লাব সংলগ্ন রাখাইন মার্কেট এলাকা ও মৎস্যবাজার এলাকায় গিয়ে ওএমএস ডিলার কিংবা তদারকি কর্মকর্তা কাউকে পাওয়া যায়নি। যদিও দু’জন ডিলারই তাদের বিক্রি শেষ বলে দাবি করেছেন। অপর ডিলার মোশারেফ আকনকে তার নির্ধারিত তুলাতলি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় পাওয়া যায়নি। তিনি কলাপাড়া খাদ্য অধিপ্তরের দেনদরবারে ব্যস্ত ছিলেন বলে জানায় একটি সূত্র। কলাপাড়া পৌরসভার চারজন ডিলারদের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো ভিন্নতা নেই। সব ডিলার, তদারকি কর্মকর্তারই বর্ষার অজুহাত।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাব সংলগ্ন এলাকার ডিলার ও মৎস্যবাজার এলাকার দু’তদারকি কর্মকর্তাকে স্পটে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনেও তাদের সাড়া মেলেনি। কলাপাড়া হাইস্কুল এলাকার তদারকি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র রক্ষিতকেও স্পটে পাওয়া না গেলেও তিনি সাড়া দেন মুঠোফোনে। তিনি বলেন, ‘প্রবল বর্ষা হচ্ছে। সকালে ছিলাম, এখন বাসায় আছি। বিকালে আবার যাবো।’ কলাপাড়া খাদ্য পরিদর্শক মোসা. আরিফা সুলতানা বলেন, ‘সঠিকভাবে চাল, আটা বিক্রি করা হচ্ছে। কোন্ স্পটে সমস্যা বলেন, তদারকি কর্মকর্তা না থাকলে ইউএনও স্যারকে জানান।’ ইউএনও আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘দুস্থদের ওএমএস চাল বিক্রিতে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নাই। কেউ অনিয়ম করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’