× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সৎ ভাই কর্তৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ / সাবেক রাষ্ট্রদূত ও মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে দেখতে চেয়ে পরমা মঞ্জুরের আকুতি

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার

বাবার গুরুতর অসুস্থতার খবরে দেশে এসেছেন পরমা মঞ্জুর। কিন্তু জন্মদাতা পিতাকে দেখতে দেয়নি তার সৎ ভাই। এমনকি পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় চেয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে সংবাদমাধ্যমসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। বাবা পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল আলম গুরুতর অসুস্থ হলে দেশে ফিরেও একাধিকবার চেষ্টা করেও দেখতে পারেন নি পরমা, উল্টো নিগ্রহের শিকার হয়েছেন সৎ ভাই অরণ্য মঞ্জুরের হাতে। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, বাবার অসুস্থতার সুযোগে সকল সম্পত্তি একাই নিজের নামে লিখে নিয়ে আত্মসাৎের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সৎ ভাই। উপায়ন্তর না দেখে আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন পরমা মঞ্জুর।
 
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। আমার মা রত্না রহমাতুল্লাহ এবং বাবা মঞ্জুরুল আলম। তারা দুজনেই মুক্তিযোদ্ধা। বাবা ছিলেন পররাষ্ট্র ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। তিনি সর্বশেষ সুইডেন-এ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমার মা বর্তমান থাকা অবস্থায় আমার পিতা হুসনা নামে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক (আনুমানিক ১৫/১৬ বছর) মেয়েকে ১৯৮০ সনে ঘরে নিয়ে আসেন এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়, যার নাম অরণ্য মঞ্জুর।
পরমা বলেন, বাবা যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন আমার বয়স ৪। এই বিয়ের পর আমার মায়ের সঙ্গে বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপরও আমি আমার দাদা-দাদির কাছে একই বাড়িতে থাকি। বাড়ির ঠিকানা ধানমণ্ডি, রোড নং-২৭, বাসা নং-৩৬১/১ পুরাতন, বর্তমান নতুন রোড নং-১৬, বাসা-১১। এই বাড়িতে থেকে স্কুল কলেজের পড়াশোনা শেষ করে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবিতে চাকরিতে যোগ দেই। কিছুকাল এখানে চাকরি করার পর আমি ইউনিসেফে যোগ দেই। তখনো আমি ধানমণ্ডির বাসায় ছিলাম।
আমার পড়াশোনার খরচ প্রথমে আমার মা এবং পরে দাদা চালাতেন। আমার দাদার নাম দলিলউদ্দিন লস্কর। পরবর্তীতে আমি বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য নরওয়ে যাই ২০০০ সালে। উচ্চ শিক্ষা শেষে আমি কানাডার ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটিতে চাকরি করি। বর্তমানে আমি আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত আছি।
তিনি বলেন, আমার সৎভাই অরণ্যের জন্মের পর থেকে আমার সৎমা আমার প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আচরণ করতে থাকেন। বিদেশে অবস্থানকালীন আমি সবসময় টেলিফোনে বাবার খোঁজখবর রাখতাম। সম্প্রতি জানতে পারি যে, বাবা শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তাই বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু আমার কল যাচ্ছিল না। পরে জানতে পারি, বিগত কয়েক মাস যাবৎ সৎমা হুসনা মঞ্জুর ও সৎভাই অরণ্য মঞ্জুর বাবার মোবাইল ফোনে বিদেশি ইনকামিং ও আউটগোয়িং কল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্লক করে রেখেছে। আরো জানতে পারি, বাবাকে অতি মাত্রায় ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য ক্ষতিকর ওষুধ দিয়ে বেশিরভাগ সময় অবচেতন করে রাখা হয়।
এছাড়াও জানতে পারি, সৎমা হুসনা মঞ্জুর ও সৎভাই অরণ্য মঞ্জুর ধানমণ্ডির (ধানমণ্ডি, শেখ কামাল সরণি, রোড নং-২৭, বাসা নং-৩৬১/১ পুরাতন, বর্তমান নতুন রোড নং-১৬, বাসা-১১, ঢাকা-১২০৫) এক বিঘা জমি এবং সেখানকার দুটি দোতলা বাড়ি অরণ্য মঞ্জুরের নামে হেবা করে নিয়েছে (হেবার রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নং-৩১৩, তারিখঃ ২২/০১/২০২০)।
উল্লেখ্য যে, প্রকৃতপক্ষে আমার দাদার মৃত্যুর পর বাবা ওয়ারিশ সূত্রে এ সম্পত্তির মালিক হন। মূলত আমার বাবার অসুস্থতা এবং বার্ধক্যের সুযোগ নিয়ে তাকে প্রভাবিত করে আমাকে বঞ্চিত করে ধানমণ্ডির ৩৩ শতাংশ জমি আত্মসাৎ করে; যা জঘন্য অপরাধ।
এদিকে, আমি বাবার অসুস্থতার কথা জেনে এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে আমার মাকে বাবার শারীরিক অবস্থার খবর নেয়ার জন্য ধানমণ্ডির বাসায় পাঠাই। আমার মায়ের সঙ্গে আমার বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলেও আমার খোঁজখবর নেয়ার জন্য ধানমণ্ডির ওই বাসায় আমার মায়ের যাতায়াত ছিল। এতে কোনোদিন আমার দাদা-দাদি এমনকি আমার বাবাও বাধার সৃষ্টি করেননি বরং স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এ বছরের ১৬/০৬/২০২১ তারিখে আমার মা ওই বাসায় গেলে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ সময় তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। আমি বাবার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।
বিদেশে থাকা অবস্থায় একথা জানতে পেরে আমি মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়ি এবং দ্রুত ঢাকায় আসি। এরপর ১৫/০৭/২০২১ তারিখ আমার ফুফু (বাবার মামাতো বোন, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব) এবং আমার মাসহ ধানমণ্ডির ওই বাসায় বাবাকে দেখতে যাই। আমরা প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে গেটের বাইরে অপেক্ষা করলেও আমাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ সময় আমার সৎভাই অরণ্য মঞ্জুর গেটে এসে মারমুখো হয়ে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বলে বাড়ির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে মেরে ফেলবে। সে আরো বলে যে, “এ বাড়ি এখন আর মঞ্জুরুল আলমের নয়। এখন থেকে এই বাড়ির মালিক আমি, আমার অনুমতি ছাড়া কেউ এই বাড়িতে ঢুকতে পারবে না”।
বাবার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে এবং পরবর্তীতে উপয়ান্তর না পেয়ে আমি ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সাহায্য প্রার্থনা করি। কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশের একটি টিম আসে এবং বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। পুলিশ আসার প্রায় এক ঘণ্টা পরে বাড়ির ভেতর থেকে একজন এসে পুলিশকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় কিন্তু আমাদেরকে ঢুকতে দেয়া হইনি। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে জানায় যে এরা অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখো। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আপনাদেরকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেবে না এবং আপনার বাবাকে দেখতে দেবে না। আপনারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
এরপর ধানমণ্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি যার নম্বর ৬৯৭/২১। অতঃপর আমরা ডিসি কোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারা মতে মামলা দায়ের করলে আদালতের আদেশ নিয়ে বাবাকে দেখতে যাই। কিন্তু তখনো বাধাপ্রাপ্ত হই এবং কিছু সময়ের জন্য দেখা করতে পারলেও আমাদের দ্রুত বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
আমি বিশস্তসূত্রে জানতে পেরেছি আমার সৎমা হুসনা মঞ্জুর এবং সৎভাই অরণ্য মঞ্জুর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমার অসুস্থ পিতাকে প্রভাবিত করে ধানমণ্ডির বাড়ি (৩৩ শতাংশ) সৎভাই অরণ্য মঞ্জুরের নামে লিখে নিয়েছে এবং বাবার অন্যান্য সম্পত্তিও নিজেদের নামে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জনৈক মাহবুবুল আলম জড়িত আছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি ইতিমধ্যেই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর