× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না সিলেটে

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার

চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না সিলেটে। এক মাস ধরে একই অবস্থা। উন্নতির কোনো লক্ষণই নেই। বরং দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। হাসপাতালমুখী রোগীর স্রোত বাড়ছে। জায়গা না থাকায় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগীদের। হাঁফিয়ে উঠছেন চিকিৎসকরা। রাস্তায় এম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে ভারি পরিবেশ।
জীবন বাঁচাতে অজানায় ছুটে চলেছেন তারা। আশায় আশায় রোগী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই সিলেটের পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল। সিলেটের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায় মুমূর্ষু রোগী নিয়ে এম্বুলেন্সে করে স্বজনরা আসছেন। কিন্তু জায়গা নেই। এ কারণে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হচ্ছেন রোগী ফিরিয়ে দিতে। রোগী ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি বেদনাদায়ক বলে জানান তিনি।’ স্বাস্থ্যবিভাগের পরিসংখ্যান মতে, সিলেটে গতকালও মারা গেছেন ১২ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসব রোগী মারা যান। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬৬০ জন। সিলেটে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। একই হারে নমুনা পরীক্ষা করার কারণে প্রতিদিনই একই হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হলে আরো রোগী বাড়বে। বুধবার সিলেটে মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জনের। তবে, গতকাল দিনের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। হাসপাতালে রোগীর চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। গত এক মাসের মধ্যে একদিনে এতো রোগী হাসপাতালমুখী হননি। সকাল থেকেই হাসপাতালে হাসপাতালে রোগী নিয়ে দৌড়াতে থাকেন স্বজনরা। ভোররাতেও ছিল রোগীর ভিড়। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাফি আহমদ জানিয়েছেন, গতকাল সকালের দিকে হাসপাতালে কয়েকটি সিট খালি করা হয়েছিল। কিন্তু বিকালের আগেই এসব সিটে রোগী ভর্তি হয়ে যান। অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে কয়েকজন রোগীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৩ জন মুমূর্ষু রোগী এখনো আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষা করছেন। এ কারণে বাইরের আইসিইউ রোগী ভর্তির সুযোগ দেয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে। গত এক মাস ধরে এই হাসপাতালে আইসিইউ বেড পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সবসময় করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভিড় লেগেই আছে। কোথাও আইসিইউ বেড না পেয়ে রোগীরা শেষ ঠিকানা হিসেবে ওসমানীতে ভিড় করেন। কিন্তু এই হাসপাতালেও মেলে না আইসিইউ বেড। ৩ ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার অধিকসংখ্যক রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ৩শ’র উপরে রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে রোগীর প্রচণ্ড চাপ। সিলিন্ডার দিয়ে তাদের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, হাসপাতালে ৪শ’ বেডের নতুন আরেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে রোগী ভর্তি সম্ভব হচ্ছে না। এখন রোগী বেড়ে যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডে অনুমতি মিললেও  রিজার্ভ অক্সিজেনের ব্যবস্থা না করতে পারলে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হবে না। সিলেটের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ জানিয়েছেন, ‘আমরা এখন ব্যবসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি না। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল সাপোর্ট সুবিধা অনেক বেশি। কিন্তু গত এক মাসে ৪গুণ বেশি রোগী ভর্তি করেও চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি হাসপাতালের ওনার্স, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন। রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে ম্যানেজ করেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘করোনার বিরুদ্ধে শুধু হাসপাতালে লড়াই করলে চলবে না। আমাদের এখন সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে জানান তিনি।’ স্বাস্থ্যবিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসার পরিধি গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। আরো ১২ জনের মৃত্যু: গতকাল সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য মতে, সিলেট বিভাগে গতকাল নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া ৬৬০ জনের মধ্যে ৩১২ জনই সিলেট জেলার। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জের ১৩০, হবিগঞ্জের ৫৩ ও মৌলভীবাজারের ৯১ জন রয়েছেন। এছাড়া- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৭৪ জন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিলেট বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬৭ জনে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ৫২৪, সুনামগঞ্জের ৪৯, হবিগঞ্জের ৩০, মৌলভীবাজারের ৫৬ ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ৮ জন রয়েছেন।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর