× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

প্রথম পাতা

কাজী সোহাগ
৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার

লীগযুক্ত ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রথমে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করবে দলটি। এরপর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করবে সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া দলের যেসব নেতা এসব সংগঠনের উপদেষ্টা বা নেপথ্যে থেকে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হবে। ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না দলটি। তাই প্রশাসনিক সহায়তা ও দলীয় নেতাদের সতর্ক করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এক আওয়ামী লীগে এখন শত শত লীগ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন এখন আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এসব সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত ধরেই গড়ে ওঠা। এখন অন্তত এমন দুই শতাধিক সংগঠন নামের আগে-পরে লীগ, বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে চলছে। ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রীরাও অংশ নিয়ে থাকেন এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে। কিছু সংগঠন আছে রাজধানীতে ইস্যুকেন্দ্রিক আলোচনায় টিভি ক্যামেরার সমাবেশ ঘটানোই তাদের কাজ। এসব আয়োজনে আওয়ামী লীগের সব বড় বড় নেতাও অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বাইরে যারা লীগ যুক্ত করে স্বার্থ হাসিলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা আসলে অবৈধ। আমাদের দলের কিছু নেতা তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান। সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওইসব সংগঠন নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন। আশা করি দলের কোনো নেতা ভবিষ্যতে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের অনুষ্ঠানে যাবেন না। ভুঁইফোঁড় সংগঠন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্বীকৃত সংগঠনের বাইরে কোনো মনগড়া বা হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সংগঠনকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। দলের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের রয়েছে সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন উপ-কমিটি। দল ক্ষমতায় থাকলে নানান সুবিধাভোগী শ্রেণি এবং বসন্তের কোকিলরা এ ধরনের চেষ্টায় লিপ্ত হয়, যুক্ত হয় নানান আগাছা-পরগাছা। দলীয় সভাপতির ঘোষণা অনুযায়ী দলের মধ্যে কারও প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে এ ধরনের কাজে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। নেতাদের অনেকে বলছেন, এসব সংগঠনের হাত ধরে সুবিধা আদায়ের জন্য ভিন্নপন্থি নেতারাও এখন আওয়ামী লীগে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলাই তাদের কাজ। এসব ছবি দিয়ে তারা প্রতারণার জাল বিছিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের অতীতে কোনো সম্পর্ক ছিল না, এখনো নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক তৈরি করছে। এদের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে সতর্ক নজর দেয়া হচ্ছে। ভুঁইফোঁড়দের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নেই। তবে তাদেরকে প্রশ্রয় না দিলে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এ ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যদি কেউ রাজনৈতিক সংশ্রব না রাখে তাহলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। তবে ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম দিয়ে যারা রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলছেন তারা আসলে আওয়ামী লীগের কেউ নন। তারা সবাই অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি। পুলিশকে অবহিত করেছি। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও রয়েছে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের তৎপরতা। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত আটটি সহযোগী ও তিনটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে- যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ ও আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম তিনটি সংগঠন হলো- ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ। এর বাইরে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের মৌখিক সম্মতিতে কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী মোটরচালক লীগ, হকার্স লীগ ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ। আর বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম করে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে এমন কয়েকটি সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জের ধরে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দলের সহযোগী সংগঠন ছাড়া কেউ নামের সঙ্গে ‘লীগ’ শব্দ যোগ করতে পারবে না।
লীগযুক্ত ভুঁইফোঁড় সংগঠন: বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত যেসব লীগযুক্ত ভুঁইফোঁড় সংগঠনের ব্যানার-পোস্টার দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইলেকট্রিক লীগ, নাপিত লীগ, ফকির লীগ, প্রবীণ লীগ, বাউল লীগ, গাড়িচালক লীগ, স্বাধীনতা লীগ, তরুণ জনতা লীগ, তরুণ লীগ,মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, জাতীয় শিশু-কিশোর লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী সোনার বাংলা লীগ, আওয়ামী বাস্তুহারা কল্যাণ সমিতি, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী পর্যটন লীগ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী অনলাইন লীগ, বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ, নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, আমরা মুজিব হবো, নৌকার নতুন প্রজন্ম, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, একুশে আগস্টের ঘাতক নির্মূল কমিটি, সজীব ওয়াজেদ জয় পরিষদ, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, আমরা নৌকা প্রজন্ম, নৌকার নতুন প্রজন্ম, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, আমরা মুজিব সেনা, রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, শেখ রাসেল শিশু পরিষদ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, পঁচাত্তরের ঘাতক নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধ ও গণমুক্তি আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, আওয়ামী শিশু-যুবক সাংস্কৃতিক জোট, চেতনায় মুজিব, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, জনসেবা লীগ, নবীন লীগসহ বাহারি নামের নানা সংগঠন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর