× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমার মা কি আইসিইউ’র জন্য মারা যাবে?

প্রথম পাতা

ফাহিমা আক্তার সুমি
৩১ জুলাই ২০২১, শনিবার

নারগিস আক্তারের আহাজারিতে ভারী হাসপাতালের বাতাস। চার হাসপাতাল ঘুরেও মায়ের জন্য একটা আইসিইউ বেড পাইনি। আমার মা কি আইসিইউ’র জন্য মারা যাবে? আমার মা’কে বাঁচান। নারগিসের এ আকুতিতে অসহায় আশপাশের মানুষজন। শুক্রবার দুপুরে মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালের সামনে অসুস্থ মা’কে নিয়ে টানা দুইঘণ্টা এম্বুলেন্সে বসে ছিল নারগিস। তার মা মনুদা বেগম শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন এম্বুলেন্সের ভিতরে। মায়ের পাশে বসে নারগিস তার শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। চাঁদপুর থেকে আসা এই রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন।
কিন্তু মহাখালী কোভিড হাসপাতালসহ চার হাসপাতালে গিয়েও মেলেনি তার আইসিইউ শয্যা। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যেখানে আইসিইউ সুবিধা আছে সেখানে নেয়ার জন্য। এই অবস্থায় অসহায় মেয়ে মা’কে নিয়ে কোথায় যাবে বুঝতে পারছে না। আকুতি জানাচ্ছিল তাকে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু মেলেনি আইসিইউ। পুনরায় এম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে চলে অন্য হাসপাতালে আইসিইউ’র খোঁজে।

নারগিস আক্তার মানবজমিনকে বলেন, পাঁচদিন ধরে মায়ের বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও কাশি। প্রথমে তাকে চাঁদপুর একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়। সেখান থেকে কিছু মেডিসিন দিয়ে দেন। তাতে কোনো উন্নতি না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসক করোনা পরীক্ষার কথা বলেন। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী করোনা পরীক্ষা করানো হয়। রেজাল্ট পজিটিভ আসে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনতে বলেন।

নারগিস জানায়, শুক্রবার সকালে এম্বুলেন্স করে মা’কে ঢাকায় নিয়ে আসি। খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। প্রথমে সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। সেখানে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এরপর ঢাকা মেডিকেলে গেলে নরমাল অক্সিজেন দিয়ে ভর্তি করানো হয়। তারপর কিছুক্ষণ পরে ডক্তার এসে অবস্থা খারাপ দেখে বলেন রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন। অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। যেখানে আইসিইউ পাবেন। আমাদের আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এরপর পিজি হাসপাতালে খবর নিই। সেখানেও আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সময় নষ্ট না করে মহাখালী করোনা ইউনিটে নিয়ে আসি। এখানেও রোগীকে ভর্তি নেয়া হয়নি। তাদেরও আইসিইউ শয্যা খালি নেই। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় নরমাল অক্সিজেন দিলে তার কোনো কাজ হবে না বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন আমরা কি করবো। মা’কে নিয়ে কোথায় যাবো। কেউ নেই আমার দেখার মতো। কয়েক হাজার টাকা শুধু এম্বুলেন্স ভাড়া লেগেছে। এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছি। কিন্তু আইসিইউ পাচ্ছি না। মা’কে কি বাঁচাতে পারবো না। এম্বুলেন্সের চালক এখানে কিছুক্ষণ বসে থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছেন। তার নাকি অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আমি এখন কোথায় যাবো। একদিকে মায়ের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ পাচ্ছি না। অন্যদিকে এম্বুলেন্স চালক অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছেন। এখন আবার মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে যাচ্ছি। দেখি সেখানে গেলে চিকিৎসক কোন ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা।

এদিকে মহাখালী ডেডিকেটেড হাসাপাতালের সামনে সকাল থেকে একটির পর একটি এম্বুলেন্স এসে ভিড়ছে শ্বাসকষ্টের রোগী নিয়ে। কেউ সাধারণ শয্যায় ভর্তি হচ্ছেন আবার কেউ আইসিইউ শয্যা না পেয়ে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন। সাভার থেকে এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী মা নূরজাহান বেগমকে নিয়ে নুরুজ্জামান। সকাল থেকে আইসিইউ শয্যা পেতে মা’কে নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন। দুই হাসপাতাল ঘুরেও মেলেনি তার আইসিইউ শয্যা। তিনি বলেন, ঈদের পর থেকে মায়ের জ্বর। মাঝে মাঝে বমি করে। কোমরের হাড়ে সমস্যা আছে। সাভারে তাকে ডাক্তার দেখানো হয়। কিছু ধারাবাহিকভাবে ওষুধ খেতে বলেন। তারপর তিনদিন পরে হালকা শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে ঢাকায় আসার পরামর্শ দেন। শুক্রবার সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউ নেই বলে জানান চিকিৎসকরা। এরপর মহাখালী করোনা ইউনিটে নিয়ে আসি। ভেবেছিলাম এই হাসপাতালে আইসিইউ পাবো। কিন্তু এখানেও নেই। সাফিয়া খাতুন ৭০ বছর বয়স। কুমিল্লা থেকে মহাখালী করোনা ইউনিটে এসেছেন জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে। পাশে থাকা মেয়ে শিউলী আক্তার জানান, মায়ের ঈদের আগে থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। কুমিল্লায় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। সেখান থেকে এই অবস্থা দেখে তারা ঢকাতে নিয়ে আসতে বলেছেন। এখনো তার করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় এই হাসপাতালে তাকে নরমাল অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে। এখনো ভর্তি করারা ব্যাপারে কিছু বলেনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর