× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
৪ আগস্ট ২০২১, বুধবার

কথায় বলে, বেশি কথায় দন্ত নষ্ট। বেশি খেলে পেট হয় নষ্ট। মূল কথা হলো- বেশি কোনো কিছুই ভালো নয়। কিন্তু করোনা নিয়ে কি দেখা যাচ্ছে? দায়িত্বশীলদের অতিকথন। অর্থাৎ বেশি কথা। এই যে, গতকাল মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বললেন, ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা টিকা নেয়া ছাড়া রাস্তায় বের হতে পারবে না। কেউ এমনটা করলে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুদ্ধির তারিফ করতে হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর। অনেকেই বলছেন, মন্ত্রীর এত বুদ্ধি! ওদিকে একইদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সোয়া কোটি ডোজ টিকা মজুত আছে। এ মাসেই আসবে আরও এক কোটি ডোজ টিকা। তাই সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে- সব মহল থেকে। অথচ সরকারি হিসাবেই সারা দেশে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকার অপেক্ষায় আছেন ৬৬ লাখ মানুষ। আরও অর্ধলক্ষাধিক প্রথম ডোজ নিয়ে বসে আছেন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায়। এ অবস্থায় হিসাব কষলে দেখা যায়, যে টিকা মজুত আছে সে টিকা রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তিদের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। আর যেটা আসবে সেটা আসার পর ভাবলে ভালো হয়। কারণ প্রতিদিনই রেজিস্ট্রেশন করা লোকজন অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের মেসেজ আসার। কিন্তু মেসেজ আর আসছে না। কেউ কেউ দুই সপ্তাহ ধরে অপেক্ষায় থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এখন দেখার বিষয় দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সের নাগরিক কতজন আছেন? ধরে নেয়া যাক ১৪ কোটি। এখন প্রশ্ন- এই ১৪ কোটি নাগরিককে টিকা দিতে কত সময় লাগবে? কত বছর লাগবে? ধরে নেয়া যাক, এক কোটি লোককে মজুত টিকা থেকে টিকা দিতে পারবে। তাহলে আরও ১৩ কোটি লোক যে আছেন টিকার আওতার বাইরে তারা রাস্তায় বেরুতে পারবেন না। কারণ বেরুলেই তারা অপরাধী হয়ে যাবেন। শাস্তির খড়গ মাথায় নিতে হবে। কার এমন শখ আছে- রাস্তায় বেরিয়ে শাস্তির খড়গ মাথায় নিবে? এমনিতেই চলমান লকডাউনে ক্ষণে ক্ষণে সিদ্ধান্ত আসছে। একদিন সময় দিয়ে হুট করে গার্মেন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। পড়িমরি করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢাকায় ছুটলেন। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ। ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হলো শ্রমিকদের। সড়ক, ফেরিতে মানুষের ঢল দেখে করোনা চিড়েচ্যাপ্টা হয়েছে নাকি মোটাতাজা হয়ে সংক্রমিত হয়েছে আল্লাহ মালুম। কত মানুষ যে মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছেন। কত মানুষ রিকশায় করে, ভ্যানে করে, কেউবা ট্রাকে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। কারণ গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের কড়া বার্তা যথাসময়ে কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। এ দৃশ্য দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নিলো- লঞ্চ চলবে। তাও সন্ধ্যায় বলা হলো আজ রাতে লঞ্চ চলবে। তবে তা আগের দিন হলে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না শ্রমিকদের। আবার ঘোষণা দেয়া হলো- ঢাকায় ফেরা মানুষদের বাসায় পৌঁছাতে রাজধানীর সড়কে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলবে। প্রশ্ন হলো- কেন সিদ্ধান্তগুলো যথাসময়ে নেয়া হচ্ছে না। কেন বারবার সিদ্ধান্ত দিতে হচ্ছে। এটা প্রমাণ করে চরম সমন্বয়হীনতার মধ্যে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ওদিকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, গার্মেন্ট খুলে দেয়ায় করোনার সংক্রমণ বাড়বে। দুদিন যেতে না যেতেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী টিকা না দিয়ে কেউ রাস্তায় বেরুলে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হবে ঘোষণা দিয়েছেন। এসব বক্তব্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় দেশে-বিদেশে। মনে রাখতে হবে, শত শুদ্ধ কাজ করলেও একটি ভুল কাজ সেই সব শুদ্ধ কাজকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। এক শিক্ষকের কথা মনে পড়ে গেল। একটি ক্লাসের ব্লাকবোর্ডে শিক্ষর্ক ৯-এর নামতা লিখছেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে। তিনি লিখলেন, ৯ একে ৭, ৯ দুগুণে ১৮, তিন ৯ সাঁতাশ, চার ৯ ছত্রিশ, পাঁচ ৯ পঁয়তাল্লিশ, ছয় ৯ চুয়ান্ন, সাত ৯ তেষট্টি, আট ৯ বাহাত্তর, নয় ৯ একাশি, নয় ১০ নব্বই। শিক্ষক বোর্ডে লিখে পেছন ফিরে দেখলেন শিক্ষার্থীদের কেউ হাসছে। কেউ কানাঘুষা করছে। এবার শিক্ষক শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বললেন, শোন- আমি ইচ্ছা করেই নামতায় ভুল করেছি। কিন্তু এখানে দশটি নামতার একটি ভুল হয়েছে। বাকি নয়টি কিন্তু ঠিক আছে। এই একটি ভুলের জন্যই তোমরা কেউ হাসছো। কেউ কানাঘুষা করছো। তোমাদের বলতে চাই, জীবনে চলার পথটাও এরকম। তুমি চলার পথে হাজারটা ভালো কাজ ও ঠিক কাজ করার পাশাপাশি একটি ভুল করলে সব শেষ। এই একটি ভুল নিয়ে সবাই তোমার সমালোচনা করবে। কিন্তু এত যে ভালো কাজ করেছো তার কোন প্রশংসা পাবে না। এই মুহূর্তে আমাকে নিয়ে তোমরা যা করছো। আমি নয়টি নামতা ঠিক করেছি এর জন্য কিন্তু তোমরা আমাকে ধন্যবাদ দাওনি। একটি ভুল তোমাদের মনে গেঁথে গেছে। আমাদের সমাজ সংসারও ঠিক তেমন। তাই জীবনে চলার পথে সব সময় ভেবেচিন্তে এগুবে। সত্যিই আমরা কি ভেবেচিন্তে এগোচ্ছি? গ্রামে একটি প্রবাদ আছে, এক মণ দুধে এক ফোঁটা চুনা মানে গরুর মূত্র পড়লে সবই শেষ। দুধ আর দুধ থাকে না। নষ্ট হয়ে যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর