× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আফগানিস্তানের ভবিষ্যত কি হবে?

মত-মতান্তর

আমীর খসরু
১৫ আগস্ট ২০২১, রবিবার

তালেবানদের কাবুল দখল শুধু আফগানিস্তানই নয়, মধ্য এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ ব্যাপক প্রভাব বিস্তারি ঘটনা হিসাবে গণ্য করতে হবে। প্রায় কুড়ি বছরের এ দফার যুদ্ধে জড়িয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগ, একদিকে যেমন ওয়াশিংটনের পরাজয় অন্যদিকে পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আর এটি তালেবানদের কাবুলসহ আফগান দখলকে তরান্বিত করেছে। তালেবানদের জব্দ করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে নিশ্চিহ্ন করার যে যুদ্ধ, তাতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষের জীবন বিনাশে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে তা আরও শতগুণে বেড়ে গেছে এখন। কাবুলসহ দেশের উপর তালেবান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঘটনায় দলে দলে আফগানরা শুধু কাবুলই নয় গ্রামগঞ্জ ছেড়ে দিগ্বিদিক ছুটছেন। এই পরিস্থিতিতে তালেবানরা কিছু কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তালেবান ও ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তালেবান নেতৃবৃন্দ ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
তবে ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সম্মতির কথা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। তালেবান নেতারা এ কারণে, কাবুল তারা দখল করে ফেলেছেন এমন ঘোষণা দেয়নি।
তালেবান শীর্ষ নেতৃত্ব যোদ্ধাদের সহিংসতায় লিপ্ত না হয়ে যারা এলাকা ত্যাগ করতে চায় তাদের নিরাপদ পথ তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালেবানরা জানে, তারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এ কারণে তারা বর্হিবিশ্বকে দেখাতে চায় যে, তারা হিংস্রতা ও সহিংসতা চায় না। তারা গত কয়েকদিনে চীন রাশিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করেছে যাতে তারা সমর্থন পায়। বিশেষ করে প্রথমে চীন ও পরে রাশিয়ায় সমর্থন তালেবানদের জন্য জরুরি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীতার কথা জানিয়ে দিয়েছে। চীন জিনজিয়ান প্রদেশের উইগুর মুসলমানদের মধ্যে উগ্রবাদের বিস্তার তালেবানরা ঘটাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। রাশিয়া তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের বিষয়ে চিন্তিত। চীন ও রাশিয়া উভয়ই মধ্য এশিয়ায় তালেবানদের প্রভাব ও এই অঞ্চলে তাদের ভুল রাজনীতির প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে ব্যাপকভাবে চিন্তিত পাকিস্তান। ইতিমধ্যে পাকিস্তান তাদের সীমান্তের অনেক এলাকা বন্ধ করে দিয়েছে। চিন্তায় পড়েছে ইরান। ভারতের চিন্তা নানামুখী। আফগানিস্তানে তাদের কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়াও ইতিপূর্বে আফগান সরকারকে সামরিক ও নানাবিধ সমর্থন দেয়ায় রীতিমতো তালেবানদের বৈরী তালিকায় পড়ে গেছে ভারত।
তালেবানরা সবশেষ কাবুল অর্থাৎ পুরো আফগানিস্তানের দখল নেয়ায় নানা দেশের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কার জন্ম হয়েছে যে, দেশে দেশে আইএসসহ স্থানীয় উগ্রবাদী গ্রুপগুলোর পুনঃউত্থান হবে এবং এরা উৎসাহিত হবে। তবে তালেবান সরকার বিশ্ববাসীকে এই বার্তাই দিবে এমনটা মনে করা হয় যে, তারা এদের সমর্থন দেবে না বা সহযোগীতা করবে না। তবে এই বিশ্বাসযোগ্যতা কতোটা অর্জিত হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তালেবানরা এখন বিভিন্ন দেশের সমর্থন চাইলেও এটি পেতে তাদের হয়তো অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। সবাই এখন দেখতে চায় যে, আগের তালেবান ও ভবিষ্যৎ তালেবানদের মধ্যে সত্যিকারের কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তানে তাদের বন্ধুদের সব ধরণের সহযোগীতা দিয়ে যাবে। যা তালেবানদের জন্য বাড়তি চাপের সৃষ্টি করবে। তবে তালেবানদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের সশস্ত্র যোদ্ধাদের শান্ত ও নিরস্ত্র করা। বিদেশি সমর্থন আদায় এবং দেশকে যুদ্ধ বিদ্রোহের হাত থেকে বের করে যতদূর সম্ভব আধুনিক আফগানিস্তান নির্মাণ করা। কিন্তু এই প্রশ্নে অর্থাৎ আধুনিক আফগানিস্তান গঠন নিয়েও তালেবানদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিতে পারে।

লেখক: আমীর খসরু, সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রধান নির্বাহী, স্টাডি গ্রুপ অন রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স, ঢাকা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর