রহমত কাবুলিওয়ালার গল্প বাঙালির মনে আজও জাগরুক। কিশোরী মেয়ে মিনিকে নিজের কন্যাজ্ঞানে ভালোবেসে রহমত এ দেশ ছেড়ে যেতে চায়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালা তাই অমর। বেশ কয়েক দশক পরে রহমতের উত্তরসূরি আসগর, মোহাম্মদ আর জালালরা আর দেশে ফিরতে চাইছে না। রবিবার দুপুরে মধ্যে কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিছনে তাদের ডেরায় বসে টিভিতে তারা দেখেছে তালেবানের কাছে আফগানিস্তানের পতন। দেখেছে কিভাবে অসহায় আফগান সেনারা তালেবান সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। হেরাত, গজনি, মাজার ই শরিফ, কান্দাহার, জালালাবাদ এর মত একটির পর একটি শহর। আসগর এর পরিবার থাকে কান্দাহারের কাছে ছোট একটি শহরে।
স্ত্রী ফাতিমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে।
বলেছিল, আফগান সেনা, পুলিশেরা শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। সেই শেষ কথা। তারপর থেকে মোবাইল সুইচড অফ। জানি না ওরা বেঁচে আছে কিনা। মাজার ই শরীফে তার ফুফার ইলেক্ট্রনিক্সের শো রুম আছে মোহাম্মদের। এটুকু খবর পেয়েছে দোকান লুট হয়ে গেছে। কিন্তু, ফুফারা বেঁচে আছে কিনা জানে না। আসগর, মোহাম্মদ কিংবা জালালরা কলকাতায় তেজারতি কারবার করে। আফগানিস্তান এখন ইসলামিক আফগানিস্তান আমিরশাহী হয়ে গেছে। তালেবান শাসনে আর দেশে ফিরতে চাই না- বললো আসগর। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবানি অত্যাচার দেখেছে আসগর। ডেরায় বসে স্মৃতি রোমন্থন করে শিউরে উঠছিল সে- রাতের বেলায় জিপ আসতো। মেয়েদের তুলে নিয়ে যেত গাড়িতে। গাড়িতেই তারা ধর্ষিত হতো। সেই বোবা কান্না এখনও শুনতে পাই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল তালেবানরা। শুধু খোলা রেখেছিল কিছু মাদ্রাসা, যেখানে উগ্র মৌলবাদের শিক্ষা দেয়া হতো। আসগর স্ত্রী আর দুই ছেলের কথা তুললো- জানি না ওরা বেঁচে আছে কিনা। যদি থাকে ওদের এখানে নিয়ে আসবো, আমার যদি খুদকুরো জুটে যায় ওদেরও যাবে। শুধু অশিক্ষিত হিং, কাজু, কিসমিসের ব্যবসায়ী, টাকা বন্ধকে খাটানো কাবুলিওয়ালারা শুধু নয়, দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আফগান ছাত্ররা ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছে। তারাও ফিরতে চায় না দুঃস্বপ্নের শাসনে। তালেবানের অত্যাচারের শোনা কাহিনী তাদের স্মৃতিতে যে দগদগে ঘা এর মতোই থেকে গেছে।