সিলেটে একটি সড়কের উন্নয়নের জন্য গত ৪৩ বছর ধরে দাবি জানানো হচ্ছে।গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার-বড়লেখা-ফেঞ্চুগঞ্জের পনেরো লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ সহজীকরণে অপরিহার্য সেই সড়কটির জন্য অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হচ্ছে না!
২০১১ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাষ্টের এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সড়কটির সর্বমোট ৫২ কিলোমিটারের মধ্যে ২৪ কিলোমিটারের উন্নয়নে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এক দশকে সেই প্রস্তর খণ্ডের লেখাগুলো আজ মলিন হতে চলেছে। কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়ন এখনো হয়নি।
গত তিন মেয়াদে দেশে একই সরকার । আমাদের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ সরকারী দলের সভাপতিমন্ডলী অর্থাৎ সর্বোচ্চ ফোরামের সদস্য। অতীতে মন্ত্রীসভায় ছিলেন। এখন মন্ত্রী না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ও সরকারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেই আছেন। তার মতো একজন জাতীয় নেতা সংসদে আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকার পরও রাস্তাটি এখনো অসম্পূর্ণ।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও, গত ১০ বছরের বেশি সময়ে রাস্তাটির কাজ হয়েছে মাত্র ১০ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে এই সড়ক আর ধানক্ষেতের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না।
বহুবার এলাকার জনগণ ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় ধানের চারা রোপন করেছে। মানববন্ধনও হয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। প্রজন্মের কাছে এ রাস্তাটি এখন হতাশা আর বেদনার আক্ষরিক প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে।
সেই অসম্পূর্ণ রাস্তাজনিত চরম দুর্ভোগ ও হতাশা থেকে এই লেখা।
সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও প্রবাসীবহুল, হাকালুকি হাওর ও কুশিয়ারা নদীবেষ্টিত বির্স্তীন ওই অঞ্চলের লাখো মানুষের হৃদয় আজো কাঙ্খিত উন্নয়ন বঞ্চনার বেদনায় বির্দীন।
স্বাধীনতার পর থেকে এ চার উপজেলার লাখো রেমিটেন্স যোদ্ধা বছরে হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নিরন্তর অবদান রেখে চলেছেন। এ অঞ্চলের তেল,গ্যাস,হাকালুকি হাওর তথা প্রাকৃতিক সম্পদের ফিরিস্তি পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি বাড়াবে বলে তা এড়িয়ে গেলাম।
এমন অবস্থায়, আমাদের শ্রদ্বেয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ জনপদের মানুষের আকুল আবেদন সড়কটির কাজ সম্পন্ন করার।
এটি একনেক অথবা এলজিইডি যে কোন একটি মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে জনপদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে সরকার অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে- সেই প্রত্যাশায় পথ চেয়ে আছি।
আমার পিতা মরহুম ইজ্জাদ আলী মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সংগঠক হিসেবে বৃটেনে কী ভুমিকা রেখেছেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। তবে মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক হিসেবে আমি আমার বাবার সরকারী স্বীকৃতির জন্য আবেদন করব না। কারন,আমি মনে করি,১৯৭১ সালে তিনি যা করেছেন, তা দেশের জন্য মাতৃভুমির টানে তাদের দায়িত্ব হিসেবে করেছেন।
ব্যাক্তিগতভাবে ৪৫ বছরে বিলেতের মুলধারার রাজনীতি ও কমিউনিটির জন্য,দেশে স্কুল,কলেজ হাসপাতাল,স্থানীয় রাস্তা ঘাট থেকে মসজিদ মাদ্রাসা সহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে যতটা সম্ভব সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছি। আমৃত্যু সেই চেষ্টাটুকু করে যাব। স্বীকৃতি বা প্রদর্শনেচ্ছায় আমার এসব কাজ নয়। বরং শিকড় তথা কমিউনিটির প্রতি দায়বোধ থেকে আমাদের এই প্রচেষ্টা। জীবন সায়াহ্নে, এই সময়ে উল্লিখিত রাস্তাটির কাজটুকু সম্পন্ন হওয়া চাই, তাই লিখছি। হয়তো এটাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার শেষ চাওয়া!
লেখক:
মোহাম্মদ লোকমান উদ্দীন
বৃটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ও আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান।