× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
২৪ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার

আফগানিস্তানের তালেবান ইস্যুতে গোটা বিশ্ব যখন বিভাজিত, তখন ভারত নানা দেশের সঙ্গে দূতিয়ালি অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন ও আরো কয়েকটি দেশে উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর মাঠে নেমেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তালেবানদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়ার অব্যবহিত পরেই বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চাচ্ছেন তিনি।

স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, আফগানিস্তানে তালেবান গোষ্ঠীর পুনরায় ক্ষমতায় আসার বিষয়টি বিশেষ চিন্তায় ফেলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এই প্রসঙ্গে এবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকে ফোন করেন তিনি। সোমবার (২৩ আগস্ট) এই ফোনালাপ হয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মতে, 'আফগানিস্তান ইস্যুকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে প্রতিটি দেশেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সুরক্ষা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।' এই নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে দুই দেশের প্রধানের। আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকা হয়েছে ২৬ আগস্ট (বৃহস্পতিবার)

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন আফগানিস্তান ছাড়াও মোদি ও অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের বার্তালাপে উঠে আসে দুই দেশের করোনা পরিস্থিতির কথাও। আলোচনায় হয় করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টিও।
এছাড়াও আলোচনা হয় জলবায়ু পরিবর্তন, দুই দেশের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়গুলোও। ইন্দো-জার্মান কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার উপরও জোর দেন মোদি।

পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, এটাই সম্ভবত চ্যান্সেলর হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অ্যাঞ্জেলার শেষ ফোনালাপ। সেপ্টেম্বরই দীর্ঘ ১৬ বছরের চ্যান্সেলর পদ থেকে অবসর নিতে চলেছেন তিনি। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সে দেশে চ্যান্সেলর পদের নির্বাচন। অনুমান করা হচ্ছে, অ্যাঞ্জেলার উত্তরসূরী হতে চলেছেন আর্মেন ল্যাশেট।

অন্যদিকে, আফগানিস্তানে পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী ২৬ আগস্ট (আগস্ট) আফগানিস্তানের বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর সরকার। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ভারতীয় সংসদের দুইটি কক্ষ তথা লোকসভা ও রাজ্যসভার নেতাদের আফগানিস্তান নিয়ে পরিস্থিতি জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কাবুল থেকে ভারতীয়দের ফেরানোর ব্যাপারেও তৎপর রয়েছে নয়াদিল্লি। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ২০০ জনকে আফগানিস্তান থেকে ফেরানো হয়েছে। দুটি সি-১৭ বিমানে করে তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে যে, তালেবানদের আফগান মসনদে বসায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিসাম্য ও ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাপক পালাবদলের প্রেক্ষিতে ভারত নিজের অবস্থা সুদৃঢ় করতে গোড়া থেকেই তৎপর। ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গণির সময় ভারত-আফগান সম্পর্ক ছিল মধুর ও উষ্ণ। কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় পতিত সরকারের মতো ভারতের অবস্থানও নাজুক হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাধান্য পায় চীন। দৃশ্যপটে প্রবলভাবে আবির্ভূত হয় পাকিস্তান। মেরুকরণের ধারায় রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক দ্রুত তালেবানদের পাশে এসে দাঁড়ায়।

আফগানিস্তানে তালেবানদের পুনরুত্থানে আমেরিকার পরাজয়কে বড় করে দেখানো হলেও আঞ্চলিক শক্তি বিন্যাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভারতের। ভারত ছিল আফগানিস্তানে আমেরিকান যাবতীয় তৎপরতার প্রধান সহযোগী। আফগানিস্তানে অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্গঠনে ভারতীয়তা অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছিল তালেবানদের ক্ষমতায় আসার পূর্ব-পর্যন্ত।

তালেবানরা গোটা আফগানিস্তান হয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় কাবুল দখল করলে নিমেষে বদলে যায় দৃশ্যপট। পলায়নপর আমেরিকার অনুগমন করে ভারত আর সামনে চলে আসে চীন, পাকিস্তান। বস্তুত কাবুলে শুধু তালেবানের ক্ষমতা দখলই হয় নি কিংবা আমেরিকার পশ্চাদপসরণ ঘটে নি, বরং ভারতের সঙ্গে নানা কারণে বৈরী দেশগুলোও একাট্টা হয়েছে সেখানকার পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। তদুপরি, আফগান প্রসঙ্গে ভারতের নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক এবং সামরিক বিন্যাসেও বিরাট প্রভাব ফেলেছে।

ফলে ঘরে ও বাইরে ভারতের মোদি সরকার নড়েচড়ে বসেছে। আন্তর্জাতিকভাবে তালেবানদের বিরুদ্ধে মিত্র সংগ্রহের পাশাপাশি দেশের ভেতরের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোরও সমর্থন পাওয়ার চেষ্টাও করছে। মাসের পর মাস চলমান কৃষক আন্দোলনে বহু লোক মারা গেলেও যে মোদি সরকার সকল বিরোধীদের আবেদন অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করে সর্বদলীয় বৈঠক করে নি, তারাই এখন তালেবান ইস্যুতে চটজলদি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে। তালেবানদের ক্ষমতা দখল আফগানিস্তান বা পশ্চিমা বিশ্বের কিছু কিছু দেশের চেয়ে প্রধান হয়ে উঠেছে ভারতের কাছে। বিব্রত ও নিঃসঙ্গ ভারত তালেবান ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত কোন অবস্থান ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর