ইজিবাইকের চাকার মতো ঘুরছে জায়েদার জীবন। অভাব দূর করতে জীবন ও জীবিকার অবলম্বন হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে ইজিবাইকের স্টিয়ারিং। আর ১০ জন মেয়ের মতো যে বয়সে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে ঘর সংসার করার কথা সেই বয়সে জায়েদার জীবন কাটছে ইজিবাইকের সিটে চালকের আসনে বসে। কাঁক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যশোর শহর ও শহরতলীর অলিগলিতে যাত্রী টেনে যা আয় হয় তার সিংহভাগ চলে যায় এনজিও’র কিস্তি পরিশোধ করতে। বাকি টাকা দিয়ে চলে জায়েদার জীবন সংগ্রাম। তারপরও জায়েদা খুশি। তার কথা সৎ পথে পরিশ্রম করে যা পাচ্ছি তাতে বরকত আছে। এখন আর কেউ তাকে চোরাকারবারি বলে ডাকে না।
সবাই সম্মান করে ডাকে জায়েদা আপা। অনেকে আবার জায়েদা ড্রাইভার বলেও ডাকে। জায়েদা বেগম বলেন, ‘বারবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মনস্থির করি ইজিবাইক চালাবো। একটি সমিতির সদস্য হয়ে সেখান থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এক লাখ ষাট হাজার টাকা দিয়ে একটি ইজিবাইক কিনি। ২০১৭ সালে জুন মাসে ইজিবাইকের স্টিয়ারিং ধরে রাস্তায় নেমে পড়ি। গত পাঁচ বছর ইজিবাইকের চাকার সঙ্গে ‘সচ্ছলতার চাকাও’ চালু রেখেছি।’ জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি এখন অনেক ভালো আছি। প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা আয় হয়। পাঁচ বছরের আয়ের টাকায় চার শতক জমিও কিনেছি। মাথা গোঁজার জন্য একটি ঘর তৈরির কাজ শুরু করেছি। তবে জায়েদা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি নারী হয়ে ইজিবাইক চালাই বলে অনেকে বিশেষ করে পুরুষ চালকেরা নানা কটু কথা বলেন। হেনস্তা হতে হয় পুরুষ চালকদের কাছে। তবে যে যাই বলুক আর কোনো দিন অন্ধকার জগতে ফিরে যেতে চাই না। অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এই পথ চলায়। এই ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’ যশোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ জেলায় একমাত্র নারী ইজিবাইক চালক জায়েদা বেগম। তিনি আগে কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকে ইজিবাইক চালক হওয়া এটা একটা দৃষ্টান্ত। তাকে সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব।’