× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে কমেছে করোনার দাপট

এক্সক্লুসিভ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৯ আগস্ট ২০২১, রবিবার

সিলেটে কমেছে করোনার দাপট। প্রায় আড়াই মাস পর এসে সংক্রমণের হার কমে এসেছে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। গত এক সপ্তাহ ধরে এই হারে আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে রোগীরা। মৃত্যুর মিছিলও কমেছে। গতকাল সিলেটে মারা গেছেন ৬ জন। তবে মৃত্যু ও সংক্রমণ কমলেও সতর্ক রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কারণ লকডাউন খোলার পর সিলেটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এতে করে যেকোনো সময় রোগী বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
এজন্য করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর তাগিদ দিয়েছেন তারা। গত বছরের এপ্রিল মাসে সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর এপ্রিল থেকে ওই বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত সিলেটে তাণ্ডব চালিয়েছে মহামারি করোনা। ওই সময় করোনার কাছে হার মেনেছিলেন সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির শীর্ষ নেতা এম এ হকসহ অনেকেই। তাদের মৃত্যুতে সিলেটে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক আরও জেকে বসে। করোনায় বিপর্যস্ত হয় সিলেট। কিন্তু আগস্ট মাসে স্বস্তি ফিরে। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ৮ মাস করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত ও মৃত্যু অব্যাহত থাকলেও সেটি নিয়ে চিন্তিত ছিল না স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই সময় আক্রান্ত শনাক্তদের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। অন্তত করোনায় আক্রান্তদের কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাননি। চলতি বছরের শুরুতে সিলেটে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে শঙ্কা তৈরি হয়। সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা হচ্ছে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্ত অঞ্চল। ফলে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি ছিল। এমনকি সীমান্ত পথে ব্যবসা বাণিজ্যও বন্ধ ছিল। এরপরও করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি সিলেট। দেশের উত্তর-দক্ষিণ এলাকা থেকে প্রবেশ করা করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট গত জুন মাসের প্রথম দিকে এসে সিলেটকে গ্রাস করে। এরপর থেকে শুরু হয় গণ সংক্রমণ। সিলেটে এবারের সংক্রমণ ছিল ভিন্ন। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সিলেটের শহর ও গ্রামকে সমানভাবে গ্রাস করেছিল। ফলে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সিলেটজুড়ে করোনার তাণ্ডব শুরু হয়। গোটা জুলাই মাসজুড়ে লকডাউনের মধ্যে তাণ্ডব চালায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এই এক মাসে সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা যায়। সংক্রমণও হয় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। তবে ভয়ঙ্কর জুলাই আবির্ভূত হয়েছিল অভিশাপ রূপে। একসঙ্গে রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে সিলেটে অস্বস্তি দেখা দেয়। এক পর্যায়ে আইসিইউ সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এরপর করোনা রোগী ভর্তির জন্য সাধারণ বেডও পাওয়া যায়নি। এতে করে হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক মানুষ গাড়িতে, বাড়িতে হাহাকার করতে করতে মৃত্যুবরণ করেন। সিলিন্ডার অক্সিজেন সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরেও চলে গিয়েছিল। কিন্তু আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করে। এখন সংক্রমণ চলে এসে ২০ শতাংশের নিচে। গত এক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার একই ধারায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৭৭২ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১২৭ জন। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সিলেট জেলায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, হবিগঞ্জে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৌলভীবাজারে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এখনো বিভাগের মধ্যে মৌলভীবাজারে সংক্রমণের হার বেশি থাকলেও সেটি দ্রুতই কমছে বলে জানিয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, সিলেটে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে  ৫২ হাজার ৩৫১ জন। গেল ১৭ মাসের মধ্যে জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত শনাক্তদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৩২ হাজার ৩২৯ জন, সুনামগঞ্জে ৬ হাজার ৬১ জন, হবিগঞ্জে ৬ হাজার ২৮১ জন ও মৌলভীবাজারে ৭ হাজার ৬৮০ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪২ হাজার ৯০৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৮ হাজার ৮৯৩ জন, সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ৭০৮ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৩৫৬ জন ও মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৯৪৮ জন সুস্থ হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১ হাজার ৪৩ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৮৫৫ জন, সুনামগঞ্জে ৭২ জন, হবিগঞ্জে ৪৬ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৭০ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, সিলেটের পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। দিন দিন সংক্রমণের হার কমছে। সেই সঙ্গে মৃত্যুও কমেছে। হাসপাতালেও রোগীর চাপ কমে যাচ্ছে। ফলে এখন যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি জানান, কয়েকদিন গেলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে জীবন যাপন করার আহ্বান জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর