সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মরহুম এম. সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য গুণে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। তার সাদামাটা ব্যক্তিগত জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়তো। ছিল না চাওয়া-পাওয়ার অস্থিরতা। এমনকি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা, উচ্চ বিলাসিতাও পছন্দ ছিল না একদমই। কথা বলতেন মারপ্যাঁচের জটিলতা ছাড়াই সরল-সহজ আর ইংরেজি মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। এ কারণেই দেশ- বিদেশে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তার। দেশ দুনিয়ায় নাম কুড়ানো মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সেই ছেলেটি দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাগাড়ে ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সঙ্গে বাজেট পেশ করেছেন।
কর্মে তার অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন। এটাই তার অবিচল আস্থা, বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকতা ও কর্তব্যকর্মে দায়িত্বশীলতার নজির। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তার চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের ছোঁয়া। ২০০৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রতিষ্ঠালগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আপন করে ডাকলেন দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হতে। তিনি তাই করলেন। রাজনীতিতে এলেন আলোকিত করলেন, আলোকিত হলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিকসংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তার জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা করেছিলেন তার অনেকগুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। হঠাৎ এক র্মমান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ, স্তব্ধ হয়ে যায় তার দেখা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন। গতকাল দুপুরে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম. নাসের রহমান জানান তার বাবা সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পছন্দ করতেন। দেশ ও বৃহত্তর সিলেটে তিন যে দৃষ্টান্তকারী উন্নয়ন করে গেছেন এটিই তার বড় প্রমাণ। সাইফুর রহমান মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছেন। মানুষের কল্যাণে করা উন্নয়নমূলক কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি: ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, মরহুমের পরিবার ও জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে তার গ্রামের বাড়িতে কোরআন খতম, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরনি বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে দুপুরে বাহারমর্দনের বাড়িতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও বিএনপি’র স্থানীয় জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা সকালে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।