কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় সাংবাদিকদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে, আমিও পত্রিকা দেখে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। সরকার অবশ্যই যেকোনো কারণে হিসাব তলব করতে পারে, ব্যাংক হিসাবও তলব করতে পারে। তবে আমি মনে করি এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে তাদের আমি চিনি ও জানি। তাদের অনেকের আর্থিক অবস্থাও আমি জ্ঞাত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এটি দেশের সকল মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য।
আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বব্যাপী এ ধরনের আইন আছে, আরও কঠিন আইন আছে। একজন সাংবাদিকের বা একজন গৃহিণীর বা যে কারোর চরিত্র ডিজিটাল মাধ্যমে হনন করা হলে তিনি এই আইনে প্রতিকার পাবেন। সেজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন। একই সঙ্গে এই আইন যেন সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধক না হয়, সেটি দেখতে হবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে আমার স্বাধীনতা যেন অপরের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না করে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা আছে, অনেক উন্নয়নশীল দেশেও এরকম স্বাধীনতা নেই। দুর্নীতি, অনাচার প্রতিরোধে, সমাজে শৃঙ্খলা আনতে, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়ার জন্য, অবহেলিত ব্যক্তির প্রতি সমাজ, রাষ্ট্র, সরকারের দৃষ্টিপাতের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ এখনো সমগুরুত্বে প্রকাশ হয় না। সাংবাদিকরাই গণমাধ্যমের নানা বিশৃঙ্খলা দূর করে শৃঙ্খলা আনার দাবি জানিয়েছেন- উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেছেন, আমি সাংবাদিকদের একজন হয়ে সেই চোখ দিয়ে বিষয়গুলো দেখার এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিশৃঙ্খলা দূর করার চেষ্টা করি। অনেক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা এসেছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সংবাদপত্র প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানেও নানা অনিয়ম বিশৃঙ্খলা আছে। ডিএফপিতে পত্রিকার যে প্রচার সংখ্যা, সেটি যুগ যুগ ধরে একটি অবাস্তব সংখ্যা। অনেকে সেটিকে ভৌতিক প্রচার সংখ্যা বলেন। পত্রিকা বের হয় ৩ হাজার কিন্তু প্রচার সংখ্যা এক লাখ, পত্রিকা বের হয় পাঁচ হাজার প্রচার সংখ্যা দুই লাখ। আমরা সেখানেও একটি শৃঙ্খলা আনবো। চারশ’ পত্রিকা গত দুই বছরে একটি সংখ্যাও ডিএফপিতে জমা দেয়নি। মন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যেই ১২০টির মতো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে। কারণ এই পত্রিকাগুলো বের হয় না কিন্তু বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। যেদিন বিজ্ঞাপন পায় সেদিন ছাপায়। আর এতে করে যে পত্রিকাগুলো সত্যিকারের অর্থে প্রকাশিত হয় তারা বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হয়। বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হওয়ার কারণে সেই পত্রিকার সাংবাদিকরা বেতন থেকে বঞ্চিত হন। সাংবাদিকরা দাবি জানিয়েছেন সেখানে শৃঙ্খলা আনার জন্য, সেই দাবি আমাকে সাহস জুগিয়েছে, আমি সেখানে শৃঙ্খলা আনবো। ড. হাছান বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশ ছাড়া এই উপমহাদেশে কোথাও সাংবাদিকদের এককালীন সাহায্য দেয়া হয়নি। ২০২০ সালে যখন করোনা দেখা দিলো তখন সাংবাদিকদের এককালীন সহায়তা দেয়ার জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বরাদ্দ না পেয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের অব্যবহৃত অর্থ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে বরাদ্দ দিয়ে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সাংবাদিককে করোনাকালীন সহায়তা দেয়া হয়েছে। এরপর ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সব জেনে ১০ কোটি টাকা সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দিয়েছেন। এই সাহায্য চলমান রয়েছে। ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল ও জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বক্তব্য রাখেন। ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সভা পরিচালনা করেন।