× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশে আরও ৫০০ গ্রিন ফ্যাক্টরি স্বীকৃতি পাচ্ছে

শেষের পাতা

এমএম মাসুদ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার
ফাইল ছবি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব গ্রিন বা সবুজ পোশাক কারখানা এখন বাংলাদেশে। ফলে বিশ্বের গ্রিন পোশাক কারখানার আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৪৫টি কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি কারখানাই প্ল্যাটিনাম। এছাড়া আরও প্রায় ৫০০টি গ্রিন ফ্যাক্টরি স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। সেটা শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কারখানার ৩৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। অন্য শীর্ষ দেশগুলো হলো- পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, ইউএই, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া ও আয়ারল্যান্ড।
সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারে ধসে পড়ে ৯ তলা ভবন রানা প্লাজা। এটি ছিল দেশের পোশাক শিল্পে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। ভবন ধসে প্রাণ হারান হাজারেরও বেশি মানুষ। যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তারাও পঙ্গুত্ব নিয়ে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের দিকে মনোযোগ দেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা। এখন সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উদ্যোক্তাদের দূরদর্শিতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যেই সবুজ শিল্পায়নে এই সাফল্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) পৃথিবীর প্রথম ট্রেড এসোসিয়েশন হিসেবে বিজিএমইএকে ‘২০২১ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে। পৃথিবীর প্রথম সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএ এই পুরস্কার পেয়েছে। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবুজ কারখানার খেতাব পাওয়া বাংলাদেশের তিনটি পোশাক কারখানা হচ্ছে- রেমি হোল্ডিংস, তারাসিমা অ্যাপারেলস এবং প্লামি ফ্যাশনস।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের অদম্য মনোবল ও প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ বিজিএমইএকে ইউএসজিবিসি এই পুরস্কার দিয়েছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যার দিক দিয়ে আমাদের ধারে-কাছেও নেই কোনো প্রতিযোগী দেশ। সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫ থেকে ২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ হলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ ও ৪০ শতাংশ পানির ব্যবহার কমানো সম্ভব।  
বিজিএমইএ সূত্র জনায়, সারা বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দেয়। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো- লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। গত বছরের ডিসেম্বরে সারা বিশ্বে লিড সনদ পাওয়া বাণিজ্যিক স্থাপনার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। লিড সনদের জন্য নয়টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্ল্যাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।
বিজিএমইএ তথ্য মতে, ইউএসজিবিসি থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৪৫টি কারখানা পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি পোশাক কারখানা ‘লিড প্ল্যাটিনাম’ সনদ পেয়েছে। এছাড়া ‘লিড গোল্ড’ পেয়েছে ৯১টি আর ‘লিড সিলভার’ পেয়েছে ৯টি ও ও ৩টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কারখানার ৩৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। এছাড়া আরও প্রায় ৫০০টি কারখানা সনদের অপেক্ষায় আছে।
প্ল্যাটিনাম সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশি ১৩টি কারখানা হলো- রেমি হোল্ডিং লিমিটেড, তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড, ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড, কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড, ইকোটেক্স লিমিটেড, এনকিউ সেলসিয়াস ইউনিট টু লিমিটেড, কানিজ ফ্যাশন লিমিটেড, জেনেসিস ওয়াশিং লিমিটেড, জেনেসিস ফ্যাশন লিমিটেড, এসকিউ বিডি-চায়না লিমিটেড, এসকিউ কোল ব্ল্যাঙ্ক লিমিটেড এবং এনভয় টেক্সটাইল।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্পকে বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গত বছরগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিন পোশাক কারখানার আবাসস্থল এখন বাংলাদেশে। পাশাপাশি শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্র কারখানা স্থাপনে আমরা অন্য যেকোনো প্রতিযোগী দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ফলে বিশ্ববাসীর সামনে পরিবেশবান্ধব কারখানার ব্র্যান্ডিং করে আমাদের শিল্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা সম্ভব। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, ব্র্যান্ডিংয়ে আমাদের দুর্বলতা আছে। যদিও আমরা ব্যক্তিগতভাবে দেশ-বিদেশে ব্র্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করি। সম্মিলিতভাবে কাজটি করা গেলে খুবই ভালো হয়।
শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। অধিকাংশ পোশাক কারখানাই এখন কমপ্লায়েন্স। কিন্তু শ্রমিকদের জীবন-মানের পাশাপাশি তাদের বেতন সেভাবে বাড়েনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর