অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত নতুন নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন। এই চুক্তিকে দেখা হচ্ছে চীনকে মোকাবেলায় দেশ তিনটির নতুন সামরিক প্রচেষ্টা হিসেবে। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে। তবে এমন পদক্ষেপের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে ফ্রান্স। দেশটি একে পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের সঙ্গে তুলনা করেছে। অপর দিকে চীন এই চুক্তির নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো এখনও øায়ু যুদ্ধের সময়কার মানসিকতা ধারণ করে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়েছে, অকাস নামের নতুন চুক্তিটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে করা ওই চুক্তি চীনের সঙ্গে নতুন যুদ্ধের উস্কানি দিতে পারে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ঐতিহাসিক নিরাপত্তা চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে চীন আরও বলেছে, এ চুক্তি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন' ও সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয়। এটিকে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে একটি উদ্যোগ বলেই মনে করা হচ্ছে। ওই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই সংকট বিরাজ করছে এবং এর জের ধরে উত্তেজনাও রয়েছে তুঙ্গে।
এ নিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাঁও লিজিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়ার জোট আঞ্চলিক শান্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এটি অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে জোরদার করবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশ তিনটি তাদের নিজেদের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে। চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতেও একই মনোভাব ব্যক্ত করে তিন দেশের জোট বিরোধী সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা বলেছে, অস্ট্রেলিয়া এখন চীনের একটি প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এই প্রথম তার সাবমেরিন প্রযুক্তি অন্য কাউকে দিতে যাচ্ছে। এর আগে তারা এটি শুধু বৃটেনকেই দিয়েছিল। আর এ চুক্তির মানে হল অস্ট্রেলিয়া এখন পরমাণু চালিত সাবমেরিন তৈরি করতে পারবে। এ ধরণের সাবমেরিন অন্য সাবমেরিনের তুলনায় বেশি দ্রুতগতির এবং একে চিহ্নিত করাও কঠিন। এ ধরণের সাবমেরিন কয়েক মাস পানিতে ডুবে থাকতে পারে এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। যদিও অস্ট্রেলিয়া বলছে, সাবমেরিনে পরমাণু অস্ত্র বহনের কোন পরিকল্পনা দেশটির নেই।
এদিকে পশ্চিমা মিত্র রাষ্ট্র ফ্রান্সও এই চুক্তি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিবিসি জানিয়েছে, এ চুক্তির কারণে অস্ট্রেলিয়া ১২টি সাবমেরিন নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল, তা বাতিল হয়ে গেছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা সত্যিকার অর্থেই পেছন থেকে আঘাত। আমরা অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করেছিলাম, কিন্তু সেই আস্থার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, ফ্রান্সের ক্ষোভের কারণ তারা বুঝতে পারছে। কিন্তু চুক্তির আগে তাদের সাথেও কোন আলোচনা হয়নি।