১৮ মাস পর স্কুল খুললেও বিদ্যায়গুলোতে শিক্ষার্থীর তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কম। উপরন্তু যারা আসছেন তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা। অনেক সময় মুখে মাস্ক ছাড়াই ক্লাস নিচ্ছেন খোদ শিক্ষকরা। জানা গেছে, লালমনিরহাট শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি ৮০-৮৫ শতাংশ হলেও গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের নিচে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতির হার ৫০-৫২ শতাংশ। তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর অনুপস্থিতির সংখ্যা উদ্বেগজনক।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। গরিব বাবার অভাবের সংসারের হাল ধরতে অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে। বই খাতা ছেড়ে অনেকেই কৃষিকাজ, ইটভাটা বা কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পন করেছে। কেউ কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছে কোনো শহরে। গ্রামীণ কিছু প্রাথমিকের শিক্ষার্থী চলে গেছে কওমী মাদ্রাসায়। মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েরা বেশি অনুপস্থিত। যাদের বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের কিছু ছেলে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করলেও অধিকাংশ পোশাক কারখানাসহ কর্মমুখী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন চিত্র বিরাজ করছে বলে অভিজ্ঞদের অভিমত। তিস্তা নদীর বাম তীর গোবর্দ্ধন হাট ইসমাইল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, চরাঞ্চলের অধিকাংশ অভিভাবক বিদ্যালয় চালুর খবর জানেন না। সবার মোবাইলে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। কিছু অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কাজের সন্ধানে বাইরে রয়েছেন। কিছু কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। তবে পূর্বের পরিবেশ ফেরাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। শহরের আদলে প্রতিষ্ঠিত কালীগঞ্জ কেউপি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুজ্জামান আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে, যার হার ১০-১৫ শতাংশ। যাদের বড় অংশই মেয়ে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বলেন, গত দুইদিনের পরিদর্শনে জেলার বিদ্যালয়গুলোতে গড় উপস্থিতির হার ৭২-৭৪ শতাংশ। যার মধ্যে গ্রামীণ ও চরাঞ্চলে উপস্থিতির হার আরও অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভ্যাসের পরিবর্তন হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।