কক্সবাজারের পেকুয়ায় উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বন বিটের দুইশ’ গজ অদূরে সংরক্ষিত প্যারাবন উজাড় করে জেটি নির্মাণ করেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরজমিন দেখা যায়, মগনামা লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে উপকূলীয় বন বিভাগের সৃজন করা প্যারাবন উজাড় করে আড়াইশ’ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি জেটি নির্মাণ করেছে মেসার্স শামীমা এন্ড আমিলা আইস ফ্যাক্টরি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বরফ ফিশিং ট্রলারে সরবরাহ করতে মূলত জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪ ফুট প্রস্থের এ জেটি নির্মাণে উজাড় করা হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক বাইন গাছ। তাছাড়া বরফ সংগ্রহ করতে আসা অসংখ্য ট্রলার ভিড়ছে এ প্যারাবনে। এতে প্যারাবনের বাইন ও কেওড়া গাছের ক্ষতি হচ্ছে। ভাটার সময় প্যারাবনের মধ্যে ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের চলাফেরার কারণে শ্বাসমূল নষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে গাছ।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান মোহাম্মদ রিপন বলেন, মেসার্স শামীমা এন্ড আমিলা আইস ফ্যাক্টরির মালিক ও মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ও উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বন বিটের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জেটি ঘাটটি নির্মাণ করেছেন। এতে প্যারাবন ধ্বংস হচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ’র পেকুয়া উপজেলার সভাপতি মাসউদ বিন জলিল বলেন, পেকুয়ার উপকূলে নানা কারণে দিন দিন প্যারাবন কমে আসছে। সামান্য প্যারাবন রয়েছে, যা এখন অস্তিত্ব সংকটে। উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বন বিট কেন্দ্রিক দৃষ্টিনন্দন প্যারাবনটি উজাড়ের যাবতীয় আয়োজন সেরেছেন ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। জেটি নির্মাণ ছাড়াও সম্প্রতি তিনি তেলের ভাসমান ট্যাঙ্কার বানিয়েছেন। যা প্যারাবনের আশেপাশে অবস্থান নেয়া ট্রলারে তেল সরবরাহ করবে। এতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও প্যারাবনের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই আমি অনতিবিলম্বে অবৈধ জেটি ঘাটটি উচ্ছেদ ও প্যারাবন রক্ষার আবেদন জানাচ্ছি। কারণ প্যারাবন হচ্ছে উপকূলবাসীর আপদকালীন রক্ষাকবচ। প্যারাবন উজাড়ের বিষয়ে জানতে মেসার্স শামীমা এন্ড আমিলা আইস ফ্যাক্টরির পরিচালকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোরকান নামের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। জানতে চাইলে উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বন বিট কর্মকর্তা মো. মোবারক বলেন, আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। প্যারাবনের উজাড় করে জেটি ঘাটটি আমার পূর্ববর্তী কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকাকালীন হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কিনা খতিয়ে দেখবো। উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম গোলাম মওলা বলেন, মগনামায় প্যারাবন উজাড়ের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। প্যারাবন ধ্বংসে জড়িত কাউকে ছাড় দেবে না উপকূলীয় বন বিভাগ।