× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ফেনীতে ৩০০ বাগানে হচ্ছে মাল্টার চাষ

বাংলারজমিন

ফেনী প্রতিনিধি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার

ফেনীতে ছোট-বড় ৩০০ বাগানে চাষ করা হয়েছে মাল্টার। জেলার চার উপজেলার অনাবাদি ও পতিত জমিতে মাল্টার ভালো ফলন হওয়ায় দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেক চাষি।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ফেনীতে ২০১৫ সাল থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাল্টা চাষ শুরু হলেও ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। জেলার সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চলতি বছর মাল্টার চাষ হয়েছে। শুধু সোনাগাজী নয়- জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও মাল্টার চাষ হচ্ছে। জেলার চলতি বছর ২৩.৮০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন ফলনও হচ্ছে ভালো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ সফি উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি-১) জাতের মাল্টার উদ্ভাবক। তিন বছরের মাথায় ফেনীর মাল্টা বাগানগুলোতে ব্যাপক ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাল্টা চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।
মাল্টা চাষি সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরসাহাভীকারী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোশাররফ হোসেন জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি দেন। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো বেতনে চাকরি করতেন। ২০ বছর প্রবাস জীবন শেষে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে বেকার সময় কাটাতে থাকা অবস্থায় ইউটিউবে উত্তরাঞ্চলের একজন সফল মাল্টা চাষির বেড়ে উঠার সংবাদ দেখে তিনি উৎসাহিত হন। এরপর মাল্টা চাষের সফলতার কয়েকটি ভিডিও দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকায় মাল্টা চাষ শুরু করেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে ছোট ভাই ইমাম হোসেনকে নিয়ে ৪০ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজের সাড়ে চার একর জমিতে ২ হাজার ২০০টি গাছ দিয়ে মাল্টার বাগান শুরু করেন। চলতি বছর তার বাগান থেকে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে প্রায় দুই হাজার কেজি মাল্টা বিক্রি হয়েছে। এই বাগানে আরও প্রায় ৮০০-১০০০ কেজি মাল্টা বিক্রি করা যাবে। মাত্র তিন বছরেই তিনি ‘সফল’ মাল্টা চাষি হয়েছেন।
মোশারফ হোসেন বলেন, তার বাগানে বারি মাল্টা-১ (পয়সা মাল্টা) জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে। এ জাতের মাল্টা চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। চলতি বছর প্রথমে গাছ প্রতি ৫০-৮০টির বেশি মাল্টা ধরেছে। এ বছর পাইকারি ও খুচরা প্রায় তিন লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার বাগান পরিচর্যার জন্য ১০ জন লোক কাজ করেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক মাল্টাবাগান করে বেকারত্ব মোচন করছেন। মনোরম পরিবেশ হওয়ায় প্রতিদিন বিকালে শত শত মানুষ মাল্টা বাগানে বেড়াতে আসেন।
মোশারফ আরও বলেন, মাল্টা চাষে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। তবে পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে মাল্টা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পরামর্শসহ সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়েছেন। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, সোনাগাজী উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে ও নদীর ওপারে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হয়। এ জন্য নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কৃষি বিভাগ মোশারফকে মাল্টা চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। তবে মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে উৎপাদিত মাল্টার স্বাদ মিষ্টি। সোনাগাজীর চর দরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, মোশারফের বাগানে উৎপাদিত মাল্টা আকারে বড় ও মিষ্টি। সরকারি কোনো সাহায্য ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাড়ে ৬ একরের মাল্টা ও গাছের বাগান করায় চাষি মোশারফ প্রশংসা দাবি রাখেন।
সোনাগাজীর মোশারফের মতো মাল্টা বাগান করেছেন জেলার পরশুরাম উপজেলার নিজকালিকাপুর গ্রামের আরাফাত হোসেন চৌধুরী, মহিউদ্দিন চৌধুরী, ফুলগাজী উপজেলার জিএমহাট ইউনিয়নের বসিকপুর গ্রামের মাল্টা চাষি হারুন উর রশিদসহ আরও অনেকে। ফুলগাজী উপজেলার জিএমহাট ইউনিয়নের বসিকপুর গ্রামের মাল্টা চাষি হারুন উর রশিদ বলেন, অকৃষি সমতলভূমিতে চাষের লক্ষ্যে বছর তিনেক আগে ফুলগাজীর কৃষকদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বারি-১ জাতের মাল্টার চারা দেয়। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে ১০ শতক জমিতে ৫০টি মাল্টার চারা রোপণ করেন। তিন বছরে চারাগুলো উচ্চতায় ১৫ থেকে ২০ ফুট হয়েছে। ফলে ছেয়ে গেছে গাছ। এ বছর প্রতিটি গাছে ৮০ থেকে ৯০টি মাল্টা ধরেছে। প্রতিটি মাল্টাই আকারে বড়, রসালো, খেতে মিষ্টি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ একেএম মনিরুল আলম বলেন, বারি-১ জাতের মাল্টা সুস্বাদু। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো এমন লাল এবং দো-আঁশ মাটি এ জাতের মাল্টা চাষের উপযোগী। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- আকারে অনেক বড়। বিদেশি জাতের মাল্টার মিষ্টতা টিএসএস-৯। বারি-১ মাল্টার মিষ্টতা টিএসএস-১২। তাই দেশি মাল্টার কদর বেশি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর