গত আগস্টে আফগানিস্তান দখল করেছিল তালেবান । শুরুতে তারা দাবি করেছিল, তারা বদলে গিয়েছে। নারীর অধিকার কিংবা সর্বোপরি মানবাধিকার রক্ষা করেই চলবে তারা। যত সময় গিয়েছে তত জেহাদিদের আসল রূপ সামনে আস্তে শুরু করেছে । আর তত পরিষ্কার হয়ে গেছে, তালেবান আছে তালেবানেই। তাছাড়া সমকামী, রূপান্তরকামী প্রভৃতি অর্থাত্ এককথায় এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় নিয়ে তারা কোনও প্রতিশ্রুতিও দেয়নি। তাই আফগানিস্তানের এলজিবিটিকিউ নাগরিকদের বিরুদ্ধে তালেবান কত কঠোর ধর্মীয় আইন প্রয়োগ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, কিন্তু জুলাই মাসে জার্মানির বিল্ড সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন তালেবান বিচারক বলেছিলেন, সমকামিতার জন্য মাত্র দুটি শাস্তি আছে - পাথর ছুঁড়ে বা দেয়ালের নিচে পিষে মারা ।
সেই কারণে আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে ভয়ংকর আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওই সম্প্রদায়ের মানুষরা। 'আমদের ওরা মেরে ফেলবেই। আমাদের এক্ষুনি আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।' এমনই কাতর আরজি তাদের। তালেবানের দখলে আফগানিস্তান চলে আসার পর থেকেই চরম বিপন্ন অবস্থায় এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষরা। যে কোনও সময়েই জেহাদিরা তাদের মেরে ফেলবে, এমন আশঙ্কায় কাটছে দিন। সংবাদ সংস্থা সিএনএনকে ২৫ বছরের এক এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষ জানাচ্ছেন, 'তালেবান আমার বাড়িতে এসে শাসিয়ে গিয়েছে। বলেছে, আমি বাড়ি ফিরলেই ওরা আমাকে খুন করবে। হ্যাঁ, আমরা এলজিবিটি। এটা আমাদের দোষ নয়। ওরা যেটা করতে পারে তা হলো- আমাদের খুন করা। 'ওই যুবক জানাচ্ছেন, কীভাবে খাদ্য ও অন্যান্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। কিছু রূপান্তরকামী মানুষ সিএনএনকে বলেছেন যে, তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেসমেন্টে লুকিয়ে দিন কাটাচ্ছেন , নয়তো ঠায় তাকিয়ে আছেন নিজের ফোনের দিকে। কারণ এই মুহূর্তে বাইরে বেরোনোর পথ খোলা নেই তাদের সামনে। অনেকেরই ভয়, নতুন তালেবান সরকার আগের আমলের আইন মেনে চলবে। শেষবার ক্ষমতায় থাকার সময় এলজিবিটিকিউদের প্রাণদণ্ডের বিধান দিয়েছিল তালিবান প্রশাসন। আশঙ্কা, এখনও একই পথ ধরেই এগোবে তারা। এই মুহূর্তে গোপনে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। আফগানিস্তান সম্পর্কে ২০২০ সালের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, রূপান্তরকমীরা "বৈষম্য, আক্রমণ এবং ধর্ষণের" পাশাপাশি আফগান কর্তৃপক্ষের দ্বারা হয়রানি ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, "সমকামিতাকে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ এবং অশালীন হিসেবে দেখা হয়েছিল সেদেশে ।" আগস্টে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, তালেবানের শীর্ষ সিদ্ধান্ত নির্মাতা ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি বলেছিলেন, মৌলবাদী গোষ্ঠীর অধীনে দেশটি "শরিয়া আইন দ্বারা পরিচালিত হবে , সেই আইন অনুযায়ী সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই বিপদ থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ চাইছেন এলজিবিটিকিউরা। তাদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, যতদিন না তা হচ্ছে ততদিন তালেবানের রক্তচক্ষু এড়িয়েই গোপনে থাকতে হবে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের।
সূত্র : সিএনএন