× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জাতিসংঘে চিঠি /ভারতের ভিত্তি পয়েন্ট বাংলাদেশের জলসীমার অভ্যন্তরে, উদ্বেগ

শেষের পাতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার

সমুদ্রসীমার বেইসলাইন বা ভিত্তিরেখা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৭ বছরের দ্বিপক্ষীয় চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ করেছে বাংলাদেশ। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে বিষয়টির বিস্তারিত অবহিত করে নালিশপত্র দাখিল করেছে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের ওই চিঠিটি এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। এদিকে মহীসোপানের দাবি সংক্রান্ত একটি পৃথক কূটনৈতিক পত্রও পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দ্বিতীয় চিঠিটি বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানের দাবি সংক্রান্ত বাংলাদেশের যুক্তি খণ্ডন করে গত এপ্রিলে ভারত যে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘকে, সেটার পাল্টা বক্তব্য ঢাকার ওই চিঠি।  দিল্লির বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে ১৩ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবকে যে চিঠি দিয়েছে ঢাকা তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা অনুসরণ করেই মহীসোপানের দাবি নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর স্থলভাগের বেসলাইন বা ভিত্তিরেখা থেকে লম্বালম্বিভাবে সমুদ্রের সাড়ে তিনশ’ মাইল এলাকাকে সংশ্লিষ্ট দেশের মহীসোপান বলা হয়। এর মধ্যে ২০০ মাইল পর্যন্ত এলাকার মালিকানা সম্পূর্ণ ওই দেশের। সেখানে অন্য কোনো দেশ মাছ ধরতে পারে না এবং খনিজ সম্পদের দাবি করতে পারে না। এই ২০০ মাইলের পর ১৫০ মাইল পর্যন্ত সীমায় সমুদ্রের তলদেশে খনিজ সম্পদের মালিক ওই দেশ।
তবে মাছ ধরতে পারে সব দেশ।
জাতিসংঘকে যা বলেছে বাংলাদেশ: জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর পাঠানো ১৩ই সেপ্টেম্বর লেখা  চিঠিতে বাংলাদেশ জানিয়েছে, এ বছরের এপ্রিলে ভারত জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণবিষয়ক কমিশনে বাংলাদেশের মহীসোপানের বিষয়ে আপত্তি জানালে বিষয়টি আরও ঘোলাটে হয়ে যায়। ভারত তাদের আপত্তিতে জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ভিত্তিরেখার ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, তা ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ। তাই ভারত জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণবিষয়ক কমিশনে বাংলাদেশের দাবিকে বিবেচনায় না নেয়ার অনুরোধ জানায়। এরপর বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেয়, বিষয়টি যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটি জাতিসংঘকে জানাবে। মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে ঢাকা উল্লেখ করেছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘ এবং সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে জানায়নি। কিন্তু এখন বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে ভারতের এ অবস্থানের বিরোধিতা করছে। ভারত বিষয়টি সুরাহা না করে জাতিসংঘকে অবহিত না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ এ বিরোধিতা করতে থাকবে। ভারতের ভিত্তিরেখার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালে ভারত টেরিটোরিয়াল ওয়াটার ও মেরিটাইম জোন-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে। এর ৩৩ বছর পর ২০০৯ সালে ভিত্তিরেখা নির্ধারণের জন্য সংশোধনী আনে। আগের নিয়মে সমুদ্রের পানির নিম্নস্তর থেকে ভিত্তিরেখা নির্ধারণের বিধান থাকলেও বর্তমানে তারা ‘স্ট্রেট লাইন বেসলাইন’ পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যা আনক্লজের (জাতিসংঘের সমুদ্র আইনবিষয়ক কনভেনশন) ৭ নম্বর ধারার পরিপন্থি। বেইসলাইন বা ভিত্তিরেখা সমুদ্রতীর থেকে নির্ধারণের বিধান থাকলেও ভারতের কিছু ভিত্তিরেখা সমুদ্র থেকে ধরা হয়েছে। যেমন ৮৭ নম্বর ভিত্তি পয়েন্টটি সমুদ্র থেকে শুরু। সেখান থেকে ভারতীয় উপকূল আনুমানিক সাড়ে ১০ নটিক্যাল মাইল (নৌমাইল) দূরে। ভারতের ৮৯ নম্বর ভিত্তিপয়েন্টের অবস্থান বাংলাদেশের জলসীমানার প্রায় ২ দশমিক ৩ মাইল অভ্যন্তরে, যা নিয়ে বাংলাদেশ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন বলে জাতিসংঘকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ভারত যেভাবে তাদের বেসলাইন নির্ধারণ করেছে, সেটি আনক্লজের ৭ নম্বর ধারার পরিপন্থি। তাই আমরা এ নিয়ে আমাদের আপত্তি তুলে ধরেছি।
মহীসোপানের দাবির পক্ষে চিঠি: এর আগে গত এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান নিয়ে বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে ভারত আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল জাতিসংঘকে। ওই চিঠিতে বাংলাদেশের দাবি বিবেচনা না করার জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
এপ্রিলে ভারতের দেয়া ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায় অনুসরণ করে মহীসোপানের দাবি নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই রায় পাওয়ার পর দুই দেশ সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে। পাশাপাশি সীমানা বিন্দু কী হবে, সেটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়। এরপর আর কোনো বিরোধ থাকতে পারে না বলে বাংলাদেশের চিঠিতে মন্তব্য করা হয়।
এ বিষয়ে অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ জাতিসংঘের সালিশি আদালত নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। এরপর অন্য কোনো দাবি জাতিসংঘের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার যৌক্তিকতা নেই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর