কোভিড ঝড় হানা দিয়েছিল। তছনছ করার শঙ্কাও ছিল। ডাক্তাররাও ছিলেন চিন্তিত। হার্টে বাইপাস। তার ওপর বয়সের বাড়তি চাপ। কিন্তু না, তিনি ভয় পাননি। তিনি দমে যাননি। কোভিড ঝড় তিনি সামলেছেন ভালোভাবেই।
তার ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবল থামিয়ে দিয়েছে সবকিছু। সব শঙ্কার কালো মেঘ কাটিয়ে তিনি আলোর পথেই হাঁটছেন। বসেছেন লিরিকের টেবিলে। গায়কিতে সঙ্গত দিচ্ছেন। সুর করছেন নিয়মিত। পশ্চিবঙ্গের খ্যাতনামা সরোদ বাদক ওস্তাদ তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার ও পিউ মুখার্জী গাইছেন তার কথা ও সুরে গান। এরই মধ্যে তিনি পনেরোটি গান লিখেছেন ও সুর করেছেন তাদের জন্য।
যদিও কোভিড মুক্ত হয়ে শারীরিক ধকল সামলে উঠতে সময় নিয়েছেন বেশ ক’মাস। যখন কোভিডের সংক্রমণ দেখা দেয়, তখন চলতি বছরের মে। তিনি একাই নন আক্রান্ত হয়েছিলেন সহধর্মিণীও। এরপর কেটেছে চার মাস। কোভিডে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এভারকেয়ারে ছিলেন দিন দশেক।
বলছিলাম সাবেক সচিব, লেখক, গীতিকবি, সুরকার, কলামনিস্ট ও একসময়ের তুখোড় টকশো বক্তা মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্র কথা। শুক্রবার ছুটির বিকালে বারিধারার দূতাবাস রোডের বাসায় কথা হয় আসাফ্উদ্দৌলাহ্ ও জুলফিয়া আসাফ দম্পতির সঙ্গে। কোভিড জয়ে দু’জনই এখন অনেক ভালো আছেন। তবু কোভিড পরবর্তী কিছু শারীরিক সমস্যা তো রয়েই গেছে। সেই ধকলও কাটিয়ে উঠছেন খ্যাতনামা এই দম্পতি। একসময় রাতের টকশোতে যিনি সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে কথা বলে আলোচনার ঝড় তুলতেন। এখন কেমন আছেন? কি করে কাটছে সময়?
কাজ থেকে ছুটি নেই বলেই সাবেক এই সচিব বললেন, ওয়ান/ইলেভেনের দিনগুলোতে টেলিভিশন টকশোগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। কতোটা ঝুঁকি আমরা নিয়েছিলাম। দিন বদলেছে ঠিকই কিন্তু এখনকার টকশোগুলো খুব একটা টানে না। সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়ে ক্ষুরধার আলোচনা একেবারেই অনুপস্থিত দেখতে পাই। কোভিড জয় করলেও ছোট ছোট কিছু স্মৃতি মনে করতে কখনও কখনও কষ্ট হয় বললেন। কাছের স্মৃতি অনেক সময় ভুলে যান।
গীতিকবিতা লিখছেন নিয়মিত, সুর করছেন। কলকাতা থেকে তার লেখা ও সুরে গানের সিডিও শিগ্গিরই প্রকাশ হবে জানালেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন কলকাতা যাওয়ার। ভারতীয় ভিসার দরোজা খুলে গেলেই যাবেন। গেল মাসে এর মধ্যেই মির্জা গালিবের একশো উর্দু কবিতার ইংরেজি অনুবাদ ‘এমবারস অভ প্যাশন’- প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার ইয়র্কশায়ার পাবলিশিং হাউজ থেকে। নতুন একটি কবিতার বই প্রকাশের জন্য কাজ শুরু করেছেন। প্রকাশকের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও হয়েছে। নিয়মিত সময় করে যাচ্ছেন গল্ফ কোর্টেও। শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে চনমনে থাকতে চান। ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে কখনও কখনও নস্টালজিয়ায় ভোগেন।
শুক্রবার ছুটির বিকালে চায়ের কাপের আড্ডায় উঠে আসে শামসুর রাহমান আর সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে বিউটি বোর্ডিংয়ে ষাটের দশকের আড্ডার সেই দিনগুলোর স্মৃতি। সেই স্মৃতি খুঁজে ফিরে পেতে, রোমন্থন করতে একটাবার যেতে চান বিউটি বোর্ডিং। ডুবতে চান শর্ষে ইলিশের রসনায়। নর্থব্রুক হলের সেই সরুগলির ছুটে চলা দিনগুলোর আকুতি স্রোতের মতোই টানে এখনও। গল্প কথায় বললেন, প্রিয় বন্ধু আবু হেনা মুস্তাফা কামালের চলে যাওয়ার শেষদিনগুলো কেমন ছিল। জানালেন, বড্ড নস্টালজিক মনে হয় কখনও কখনও। প্রাণ ফিরে পেতে মনে হয় হারিয়ে যাই ইট-কাঠের এই শহরে খুঁজে পাওয়া একখণ্ড কাশবনে।