× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ক্যাম্পাসে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের চিঠি /বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরদারির সিদ্ধান্ত

প্রথম পাতা

পিয়াস সরকার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার

দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি মাসের ২৭ তারিখের পর খোলা যাবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ৫ই অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নজরদারির নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নজরে রাখতে ক্যাম্পাসে বসানো হবে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসগুলোতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সমপ্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ভাইস চ্যান্সেলরদের এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের মধ্যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের সব শিক্ষার্থীর করোনার টিকার অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সরাসরি ক্লাস শুরু করতে পারবে।

এদিকে, সম্প্রতি এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। এগুলো পুনরায় চালু হওয়ার পর যেন কোনো ধরনের ‘অরাজক পরিস্থিতি’ তৈরি না হয়, সেজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ধরনের ‘জঙ্গিবাদ প্রচার’ হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২রা সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির এক বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয় গত ৯ই সেপ্টেম্বর ইউজিসি’কে এই চিঠি পাঠায়। চিঠি পাঠানোর বিষয়টি গতকাল মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

রাজধানীর বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, এটা যেহেতু একটা একান্ত বৈঠক ছিল, তাই নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে আলোচনায় বলা হয়েছে- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তারপরও সতর্কতার খাতিরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, নজরদারি- এগুলো হচ্ছে রুটিন ওয়ার্ক। বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জঙ্গি কর্মকাণ্ড যাতে না হয় এই বিষয়গুলোই নজরে রাখা- এখানে স্পেশাল কিছু না। এই বিষয়গুলো সব সময় নজরদারিতে রাখা হয়। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলছে এই বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলরদের সঙ্গে মিটিং হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাংলাদেশের যেকোনো সেক্টরের ওপর নজরদারি করে। এটা তাদের কাজ। এটা হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠান বলে না। সব সংস্থারই ওপর গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি থাকে। এতে কারো চিন্তিত বা উৎকণ্ঠা প্রকাশের কিছু নেই। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই-চারটা কথা হয় তাই এটা নিয়েও কথা উঠছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুলহক নুর বলেন, সরকারের মধ্যে ভীতি কাজ করছে কখন একটা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারপন্থি বুদ্ধিজীবী, বিশ্লেষকরাও সরকারকে বলেছে এই সরকারের হয়তো রাজনৈতিক কোনো চাপ নেই। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে। সরকার অলিখিতভাবে আগে থেকেই কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো আগে থেকেই ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছেন কোটা সংস্কারের মতো যেন সরকারি কোনো আন্দোলন তৈরি না হয়। ক্যাম্পাসে মোটা দাগে অরাজকতা করলে ছাত্রলীগ করছে। আমি মনে করি সরকারই ভিন্নমত, বিরোধীদের দমনের একটা উছিলা। আমার মনে হয় এতে সরকারের হিতে বিপরীত হতে পারে। এর মাধ্যমে হয়তো তারাই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হল কিংবা একাডেমিক বিল্ডিংয়ে সিসি ক্যামেরা থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসাতেই পারে তাদের প্রয়োজনে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে বা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে- এটা কখনই হতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা বলেন, আমরা আগে থেকেই চাপের মুখে আছি। দীর্ঘ বন্ধে আমাদের মাঝে কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ না ঘটে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন তাদের এই ভয়। আপনারা দেখেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) কীভাবে প্রকাশ্যে দুর্নীতি হলো বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলরের মাধ্যমে। এখন এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে কোনো কিছু নিয়েই শিক্ষার্থীরা আর কথা বলতে না পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চর্চার স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে অনেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সেই ইতিহাসকেও অসম্মান করা হচ্ছে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ কর্মীদের সতর্ক থাকার এবং তুচ্ছ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে না জড়ানোর আহ্বান জানান।

এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নন বলে জানান। এছাড়াও ক্যাম্পাস খোলার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথাও বলেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর