× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পরিবেশের অবনতি ও ২২৭ পরিবেশকর্মীর মৃত্যু!

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, রবিবার

পরিবেশের বিপর্যয় বা অবনতি বলতে বায়ু, পানি ও মাটি প্রভৃতি সম্পদ নিঃশেষের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষয়সাধন, বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসসাধন, আবাস ধ্বংসকরণ, বন্যপ্রাণী বিলুপ্তকরণ এবং দূষণ বৃদ্ধিকে বোঝায়, যা জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের হুমকি, চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন প্যানেল দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে দশটি হুমকির একটি হিসেবে সতর্ক করা হয়েছে।

জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক বিপর্যয় প্রশমন কৌশল পরিবেশের অবনতিকে সংজ্ঞায়িত করেছে, সামাজিক ও পরিবেশগত উদ্দেশ্য এবং চাহিদা পূরণের নিমিত্তে পরিবেশের ধারণক্ষমতা হ্রাস হিসেবে। পরিবেশের অবনতি অনেক ধরনের হয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হলে বা প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ করা হলে পরিবেশের ক্ষয় হয়। এই সমস্যা প্রতিহত করতে পরিবেশ সুরক্ষা এবং পরিবেশগত সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন বলে বিশ্বনেতৃত্ব চিন্তিত হলেও এই সমস্যা আদৌ হ্রাস পাচ্ছে না। বরং করোনাকালেও পরিবেশের অবনতির হার বেড়েছে এবং ২২৭ পরিবেশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

পরিবেশ হানির বিপদের মধ্যে যুক্ত হয়েছে দাবানলের বিষয়টিও। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন তো বটেই, ক্যালিফোর্নিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই কমবেশি লেগে রয়েছে দাবানলের প্রকোপ। বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি মানুষের কার্যকলাপে ক্রমাগত বদলাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
বদলাচ্ছে জলবায়ু। এসবের মধ্যে এবার সামনে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিবেশের নিরাপত্তা তো প্রশ্নের মুখেই, সেইসঙ্গে যারা প্রকৃতিরক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের পরিণতিও হচ্ছে ভয়ঙ্কর।

পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে তেমনটাই। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ২২৭ জন পরিবেশকর্মী। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৬৮। গত বছরের (২০১৯) রিপোর্টে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০৭। এবার (২০২০) প্রায় আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবেশরক্ষকদের ওপর নৃশংসতার পরিমাণ। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪ জনের বেশি পরিবেশকর্মীর মৃত্যুকে আশঙ্কাজনক হিসাবেই দেখছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

গ্লোবাল উইটনেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনার শিকার হয়েছেন বনভূমি-রক্ষকরা। বৃক্ষচ্ছেদন, অবৈধ খনন, চোরাশিকার, পাচার, ঝুম চাষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছে অধিকাংশ পরিবেশকর্মীকে। বাকি ৩০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন নদী দূষণ, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিবাদীদের ওপর।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাদের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ হলেও ৩০ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ভূমিপুত্ররাই। এই ঘটনা যেন আরও বেশি করে প্রমাণ দিচ্ছে, বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যের ওপর অত্যাচার পরিবেশের পাশাপাশি বিপন্ন করে তুলছে বাস্তুতন্ত্র এবং প্রকৃতি-ঘেঁষা মানুষগুলোকে।

কিন্তু পরিবেশ ও পরিবেশকর্মী নিধনকারী আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রশাসন বিশেষ কোনও ব্যবস্থাই নেয় নি। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সব দুর্নীতি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জুড়িত রয়েছে সেসব দেশের সরকার। সরকারি মদতেই চলছে বেআইনি খাদান থেকে শুরু করে পাচার। কোথাও কোথাও আবার এসব হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে বহুজাতিক সংস্থারাও।

পরিবেশ বিপর্যয় ধারণাটি গত শতাব্দীতে আবির্ভূত হলেও এর প্রকোপ চলতি শতাব্দীতেও প্রকট। বৃক্ষ নিধন, নদী ভরাট, পাহাড় কর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমান্বয়ে প্রক্রিয়ায় চলমান দুর্যোগগুলো বিশ্ব, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় জীবনকেও পর্যুদস্ত করছে।

বৃটেনে শিল্পবিপ্লবের সময় যে ধরনের সমস্যা হয়েছিল, বিশ্ব এখন সে রকম সমস্যায় পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানিদূষণ, বায়ুতে ভারী মৌলের সংখ্যা বৃদ্ধি, বায়ুর পার্টিকেলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাসের আধিক্যসহ সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ ও সর্বোপরি পরিবেশের বিরূপ অবস্থা বিশ্ববাসীকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। দাবানল, খরা, বন্যা ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল এক বিশেষ প্রতিবেদনেও এমন সতর্কবাণী দিয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এ মাত্রা এড়াতে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশের পক্ষে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তনের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর