× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

'আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস' /বাস্তবে শান্তির, নিরাপত্তার, মানবিক অধিকারের সুযোগ কতজন পায়?

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার

আনুষ্ঠানিকতাটি বেশ চমৎকার। প্রতি বছরের মতোই এবারও ২১ সেপ্টেম্বর 'আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস' উপলক্ষে প্রথমে জাতিসংঘের মহাসচিব 'শান্তি ঘণ্টা' বাজাবেন। তারপর বিশেষ বাণী প্রদান করবেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও মানবপ্রেমিকদের 'শান্তি দূত' হিসেবে নিয়োগ করে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড স্মরণ করবেন।

একটি যুদ্ধবিহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার (যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই স্লোগানে) লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত নম্বর ৩৬/৬৭ প্রস্তাব অনুসারে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের 'তৃতীয় মঙ্গলবার' জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে 'শান্তি দিবস'।

বিশ্ব শান্তি দিবস বা আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস জাতিসংঘ কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত দিন, যা এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত বিশ্বের সকল দেশ ও সংগঠন কর্তৃক যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবী থেকে যুদ্ধ, হিংসা, আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগের মতো ঘটনা মুছে ফেলতেই প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

'আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস'কে সামনে রেখে পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ থেকে সবচেয়ে অশান্ত- এমন ১৬৩টি দেশের তালিকাও প্রকাশ করে প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সমাজ অর্থনীতি চর্চার সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস’, যে প্রতিবেদনের নাম 'গ্লোবাল পিস ইনডেক্স' বা 'জিপিআই'।

নানা আয়োজনের পরেও দুনিয়া জুড়ে সার্বিক ভাবে হানাহানি, হিংসার প্রভাব সামান্য হলেও বৃদ্ধি পায় প্রতিবছরই। এটাই হলো রূঢ় বাস্তবতা।সমীক্ষায় দেখা যায়, যে তিনটি মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে এই শান্তির সন্ধান করা হয়, সেগুলোকেও প্রতিনিয়ত অবনতিশীল। এগুলো হল: সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ওই দেশের সঙ্গে বাকি দেশের কতটা দ্বন্দ্ব রয়েছে বা সামরিকীকরণের প্রভাব।

রিপোর্ট অনুযায়ী সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হল আইসল্যান্ড।
তালিকার প্রথম দিকে ঠাঁই হয় না দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের কোনও দেশের। জায়গা মেলে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি বা বৃটেনের মতো বিশ্বের প্রথম সারির কোনও দেশেরও।

এসব তথ্যের পাশাপাশি জানা যায় বিশ্বে নানা ধরণের অশান্তি কবলিত বিপন্ন মানুষদের ক্রমবর্ধিষ্ণু সংখ্যাটিও, যাদেরকে বলা হয় শরণার্থী বা উদ্বাস্তু। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা 'ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশন ফর রিফিউজিস' (ইউএনএইচসিআর)-এর বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্টে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৪ লাখ৷ এ সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল ছিল ৭ কোটি ৯৫ লাখ। সে হিসেবে এক বছরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা শতকরা চার ভাগ বেড়েছে৷

বাস্তুচ্যুত এসকল মানুষের অধিকাংশই সংঘাত চলছে এমন দেশের প্রতিবেশি দেশের মানুষ এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নাগরিক ছিলেন। বাস্তুচ্যুতদের ৮৬ ভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আশ্রয়গ্রহণ করেছে৷ আর অনুন্নত দেশগুলোতে রয়েছে ২৭ ভাগ৷

গত বছর পর্যন্ত ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে ছিল দুই কোটি বিশ সাত লাখ শরণার্থী, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি শরণার্থী ছিল ৫৭ লাখ আর ৩৯ লাখ। তাছাড়া চার কোটি আশি লাখ মানুষ নিজ দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে৷ আর ৪১ লাখ ছিল আশ্রয়প্রার্থী৷

ইউএনএইচসিআরের এক্সপার্ট ফিলিপ্পো গ্রান্দি সমীক্ষার মুখবন্ধে জানিয়েছেন, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে একজন মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার মর্মন্তুদ কাহিনী৷ তাদের সবারই সহযোগিতা দরকার৷ শুধু মানবিক সহযোগিতাই নয়, তাদের প্রয়োজন এমন অবস্থা পরিবর্তনের সমাধানের সহযোগিতা।

আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, বাস্তুচ্যুতের ঘটনায় শিশুদের বেশি ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে সমীক্ষায়। জাতিসংঘ বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে দশ লাখ শিশু শরণার্থী হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছে পরবাসের উদ্বাস্তু শিবিরে৷ তাছাড়া বাস্তুচ্যুতের শতকরা ৪২ ভাগ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে৷ তাদের অধিকাংশেরই দীর্ঘদিন শরণার্থী হয়ে থাকার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্রিস মেলসের আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, অধিকাংশ সময়ই শরণার্থী শিশুদের নূন্যতম শিক্ষা দেওয়ার জন্য বেশি কিছু করার অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকে না৷ অনেক শরণার্থী বিশেষ করে বাবা-মায়েরা বলেছে যে, আমাদের বিষয়টি ভুলে যান, কারণ আমরা হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম৷ কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করুন৷ শিক্ষার সুযোগ পেতে তাদের সহযোগিতা করুন৷ তাদের একটি সুযোগ দিন৷

কিন্তু বাস্তবে শান্তির, নিরাপত্তার, মানবিক অধিকারের সুযোগ কতজন পায়? 'আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস'-এ জরুরিভাবে সামনে চলে আসে এসব প্রশ্নও।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর