× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ডেঙ্গু রোগী আসলে কতো?

শেষের পাতা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার

দেশে করোনার মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর বাড়তি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গুর নতুন ধরনে মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছেন বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। অসংখ্য মানুষ এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও হাসপাতালের বদলে বাসাতেই চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্য জটিলতা না থাকায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। সরকার ৬টি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করলেও দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোতে যথেষ্ট সেবা মিলছে না। তাই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। মানুষ উপায় না পেয়ে অনেকেই বাসায় বসেই চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি না হওয়ায় ডেঙ্গুর সঠিক তথ্য আসছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
করোনার কারণে রাজধানীতে সরকারি ১৩টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উল্লেখ থাকলেও দেখা যায় ৫ থেকে ৭টিতে ভর্তি করা হয় রোগী। অন্যদিকে বেসরকারি ৩২টি হাসপাতালের তথ্য দেয়ার কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু বেসরকারি অনেক হাসপাতাল ডেঙ্গু তথ্য দিচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গুর যে রিপোর্টটি পাচ্ছি, আসলে কিন্তু তার চেয়ে সংক্রমণ অনেক বেশি। কারণ অনেক বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে বা বাসায় চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে যায় না।
চিকিৎসকরা জানান, অসংখ্য মানুষ এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও হাসপাতালের বদলে বাসাতেই চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্য জটিলতা না থাকায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর এই সময়টাতে যত মানুষ রক্ত পরীক্ষা করে পজেটিভ প্রমাণিত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি। যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল না তাদের হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসাতেই চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদের সিংহভাগই বাসায় চলা চিকিৎসাতেই সেরে উঠেছেন। হাসপাতালে শয্যাশায়ী হতে হয়নি তাদের। তবে সেরে উঠলেও এসব রোগীর তথ্য নেই সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। তাই চলতি বছরে সর্বমোট কতো রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন সে তথ্যও সরকারের কাছে নেই। প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ডেঙ্গু সংক্রান্ত যে রিপোর্টগুলো আসে তাতে ঢাকা শহরের ১৩টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং ৩২টি বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য থাকে। এর বাইরে কোনো ডেঙ্গু রোগীর তথ্য তাদের কাছে থাকে না, তাই মোট রোগীর সংখ্যা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয় বলে সূত্র বলছে। ঢাকার বাইরেও নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোর বাইরে ঘরে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা তাদের প্রতিবেদনে নেই।
চিকিৎসকরা বলছেন, একজন ডেঙ্গু রোগী যদি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন তাহলে বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ থেকে পাঁচজন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী যদি আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার হয় তাহলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হতে পারে। তাই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দিয়ে কখনোই মোট আক্রান্তের হিসাব করা যাবে না- এমনই বলছেন চিকিৎসকরা।

চলতি বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায় ২১১ জন। দেশে সেপ্টেম্বরের ২১ দিনে ৫ হাজার ৮৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। আগস্টে ৭ হাজার ৬৯৮ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন এবং জুন মাসে ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ৯ জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ৪৩ জন ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের এই কয়েকদিনে ১৩ জন, আগস্টে মারা গেছেন ৩৪ জন এবং জুলাইতে ১২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৫ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩১ জন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৮৩৬ জন। অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৯৫ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ২২২ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১৫ হাজার ১৩২ জন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে ১৭৯ জন মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, সে সময় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ২০২০ সালে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০৫।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর