× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর হিসাব মিলছে না

শেষের পাতা

পিয়াস সরকার
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার

স্কুল খুলেছে শান্তার। দেশের কোটি শিক্ষার্থীর মতো শান্তার নেই এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা। পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌস শান্তা।  দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাবার পরিবর্তে ব্যস্ততা তার সংসার নিয়ে। অসুস্থ শাশুড়ির সেবা করতেই সময় কাটে শান্তার। শান্তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার কাহারোলে। বিয়ে হয়েছে গেল বছরের নভেম্বরে।

শান্তার এখন বাস গাজীপুরে।
স্বামী পোশাক শ্রমিক। মঙ্গলবার সকাল ১১টা। এই সময়ে শান্তার বান্ধবীরা হয়তো ক্লাসে ছিল। জানতে চাইলে শান্তা বলে, স্কুলে যাচ্ছিলাম। ভালোই চলছিলো সময়টা। করোনায় স্কুল বন্ধ হলো বাড়িতে বসা। বাড়িতে থাকতে থাকতে সম্বন্ধ আসলো, বাবা বিয়েও দিয়ে দিলেন। না করতে পারি নাই। অভাবের সংসার। শান্তা বলে, না আর পরীক্ষা দেবো না। সংসার করে পড়ালেখা করা যায় না। আর ওর (স্বামী) ইচ্ছাও নাই। হ্যাঁ ইচ্ছা তো ছিল আবার স্কুলে যাবো। কিন্তু হলো আর কই?
শান্তার মতো দেশে অনেক শিক্ষার্থীই আর যাবে না স্কুলের বারান্দাটায়। দীর্ঘ ১৮ মাস পর খুলেছে স্কুল-কলেজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলাকাভেদে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী পর্যন্ত ঝরে যেতে পারে। প্রায় দুই সপ্তাহ হলো খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস করছে সপ্তাহে একদিন। ফলে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার দিয়ে মেলানো যাবে না ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার। আবার অনুপস্থিত এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই ফিরবে না আর শিক্ষালয়ে। আবার শিক্ষার্থীদের ফেরার বিষয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রণালয়। অনুপস্থিতির হার স্বাভাবিক সময় থাকে ৮০ শতাংশের উপরে। এ সময় এই হার নেমে এসেছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের ঘরে। অনেক শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও রয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী। যারা ফিরবে না আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যে সংখ্যাটা জানা যাবে সপ্তাহখানেক পর।

ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ের দিক থেকে এগিয়ে উত্তরের জেলাগুলো। লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম নবী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৭২ থেকে ৭৭ শতাংশ। বাকি যে শিক্ষার্থীরা আছে তাদের এক্ষুণি ঝরে গেছে তা বলতে পারছি না। যেহেতু অনুপস্থিত। অন্য এলাকায় চলে যেতে পারে। আমরা দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর যেসব শিক্ষার্থী আসছে না তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। এরপর বুঝতে পারবো কতো শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।

এ জেলারই আদিতমারীতে উপস্থিতির পরিমাণ আরও কম। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মোহসীন আলী বলেন, আমাদের শুরুতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশ। এখন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এই অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বিভিন্ন এলাকায় কাজে যুক্ত হয়ে গেছে। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফেরানোর জন্য আমরা বলছি। তিনি আরও বলেন, কিছু শিক্ষার্থী তো আর ফিরবে না। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার পর আমরা বুঝতে পারবো কতো শতাংশ শিক্ষার্থী আর ক্লাসে ফিরবে না।

কুড়িগ্রাম জেলার নদী ভাঙনপ্রবণ ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মুকুল চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমারা স্কুল ভিজিট করছি। অনেক স্কুলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি পেয়েছি। বাকি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা খোঁজ নিয়ে জানাবেন কি কারণে স্কুলে আসছে না তারা।

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সোনাকুড়ি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোসা. আঞ্জুমানারা বেগম বলেন, আমাদের স্কুলের অষ্টমের কিছু শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণির অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর অধিকাংশেরই বিয়ে হয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার এসব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। স্কুলে গড় উপস্থিতি ৬০ শতাংশের কিছুটা বেশি।

নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার গুজিরহাট গালর্স হাইস্কুলের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানে উপস্থিতি ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বাসন্তি রানী সাহা বলেন, আমার এলাকায় প্রচুর মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় চলে গিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীরাও মাদ্রাসায় যাচ্ছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তবে অনেক শিক্ষার্থী হয়তো আর লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর