প্রথম পাতা

বৃটেনের ‘বৈষম্যমূলক’ কোয়ারেন্টিন নীতি সংশোধনের আহ্বান ভারতের

মানবজমিন ডেস্ক

২০২১-০৯-২২

বাংলাদেশ ও ভারতের যারা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদেরকে ‘পূর্ণ ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না বৃটেন। এ নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে বৃটেনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর দ্রুত বৃটেনের এই নতুন কোয়ারেন্টিন নিয়ম সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার বৃটিশ সরকার নতুন করে ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করে। এতে ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে আরও সতেরোটি দেশের যেসব নাগরিক করোনা ভ্যাকসিনের সবগুলো ডোজ নিয়েছেন তাদেরকে ‘ডবল ভ্যাকসিনেটেড’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে সে তালিকায় ঠাঁই পায়নি বাংলাদেশ কিংবা ভারত। এরফলে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ দেয়া হলেও বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের বৃটেন প্রবেশের পর ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলা মেনেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। বৃটেনের কয়েক মিলিয়ন মানুষকে এই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই দিয়েছে দেশটির সরকার। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতে দেয়া এর আইডেন্টিক্যাল বা অবিকল একই ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি দেয়নি বৃটেন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হতে যাওয়া এই নিয়ম এরইমধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ভারতীয়রা এখন একে বৈষম্যমূলক বলে আখ্যায়িত করছে। এমনকি যেসব বৃটিশকে একই ধরনের ভারতে উৎপাদিত ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তাদেরকেও কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বৃটেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার একটি টুইট করেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। এতে তিনি লিখেছেন, পরস্পরের স্বার্থেই বৃটেনের প্রতি কোয়ারেন্টিন নিয়ম সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছি। আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে, বৃটেনের এই সিদ্ধান্তের পাল্টা প্রতিশোধ নিতে পারে নয়াদিল্লি। ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, মূলত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েই এই ইস্যু। এটি বৃটিশ একটি কোম্পানির লাইসেন্সপ্রাপ্ত পণ্য যা ভারতে উৎপাদিত হয়েছে। এরইমধ্যে অনুরোধের কারণে এই ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ বৃটেনেও পাঠানো হয়েছে। তিনি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি না দেয়াকে বৈষম্যমূলক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, বৃটেনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু এতে যদি ভারত সন্তষ্ট না হয় তাহলে তারাও পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার রাখে।

এদিকে এই ইস্যু সমাধানে ভারতের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছে বৃটেন। এ নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলে সোমবার দিল্লিতে থাকা বৃটিশ হাইকমিশনের তরফ থেকে এ আশ্বাস দেয়া হয়। হাইকমিশনের এক মুখপাত্র জানান, ভারতের ভ্যাকসিনের সনদপ্রাপ্তদের বৃটেনের স্বীকৃতির আওতায় আনতে ভারত সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। আফ্রিকার অনেক দেশও যারা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রদান করেছে তাদের জন্যও একই নিয়ম রাখা হয়েছে। ভারতীয় বিরোধীদলীয় নেতা শশী থারুর জানান, এই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি বৃটেনে একটি সফর বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, পুরোপুরি ভ্যাকসিন গ্রহণ করা ভারতীয়দের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা অপমানজনক। জয়রাম রামেশ নামের আরেক সংসদ সদস্য এই নিয়মকে বর্ণবাদী আচরণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, পুরো ব্যাপারটাই আসলে চরম অযৌক্তিক। প্রথমত, এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ফর্মুলা বৃটেনেই তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতে তৈরি করার পর সেই ভ্যাকসিন বৃটেনসহ বহু দেশে পাঠানো হয়েছে। বৃটেন তাদের অন্তত ৫০ লাখ নাগরিককে ভারতে নির্মিত সেই ভ্যাকসিনও দেয়া হয়েছে। মেইড ইন ইন্ডিয়া কোভিশিল্ড বৃটেনে দেয়া হলে ক্ষতি নেই, অথচ একই জিনিস ভারতে দিলে মানা যাবে নাÑ এটা কী ধরনের যুক্তি?’

এতদিন বৃটেনে অত্যন্ত জটিল ও বিতর্কিত ‘ট্র্যাফিক লাইট ট্র্যাভেল সিস্টেম’ চালু ছিল। এর অধীনে বিভিন্ন দেশ থেকে বৃটেনে যাওয়াদের জন্য আলাদা আলাদা নিয়মকানুন মানতে হতো। তবে আগামী ৪ঠা অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে সেখানে। এতে ইউরোপ, বৃটেন, আমেরিকার বাইরেও আরও অন্তত সতেরোটি দেশে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না বা জনসন অ্যান্ড জনসনের পূর্ণ ডোজ টিকা পেয়েছেন তাদেরও সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত হিসেবে গণ্য করা হবে। অর্থাৎ তাদেরকে আর বৃটেনে নামার পর আইসোলেশনে থাকতে হবে না। এই সতেরোটি দেশের তালিকায় মালয়েশিয়া, সৌদি, কাতার বা তাইওয়ান, অ্যান্টিগার মতো দেশ জায়গা পেলেও ভারত বা বাংলাদেশ নেই।

বৃটেনের ভ্যাকসিন কার্যক্রমের অধীনে দেশটির নাগরিকদের যেসব ভ্যাকসিন সব থেকে বেশি দেয়া হয়েছে তারমধ্যে একটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ভারতেও সব থেকে বেশি প্রদান করা ভ্যাকসিন এটি। অল্প কিছু ভারতীয় অবশ্য ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন নেয়াদের অধিকাংশই এই কোভিশিল্ড নিয়েছেন। কারণ বাংলাদেশেও প্রথম দিকে ভ্যাকসিনের চালান পুরোটাই গেছে ভারত থেকে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status