× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তিউনিসিয়ায় একনায়ক প্রেসিডেন্ট, বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, সোমবার, ৩:৪২ অপরাহ্ন

সংবিধানের তোয়াক্কা করেন না তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন, ডিক্রি জারির মধ্য দিয়ে দেশ চালাবেন। এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে দেশের জনগণ। তারা তার পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল করে তুলেছে রাজধানী তিউনিস। রোববার তারা হাবিব বুরগুইবা এভিনিউসহ তিউনিসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সমবেত হন। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রাস করাকে অভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করে তারা স্লোগান দেন, জনগণ অভ্যুত্থানের পতন চায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

২০১৪ সালে দেশটিতে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তার বেশির ভাগই তিনি পাশ কেটে রেখে দিয়েছেন।
বুধবার তিনি সংবিধানকে উপেক্ষা করে ডিক্রির মাধ্যমে দেশ শাসন করার ঘোষণা দেন। এর দু’মাস আগে তিনি বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রীকে। স্থগিত করেন পার্লামেন্ট এবং প্রচলন করেন নির্বাহী কর্তৃত্বের। তার এই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আইকনিক ন্যাশনাল থিয়েটারের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তিউনিসিয়ায় বড় যেকোনো বিক্ষোভের ঐতিহাসিক স্থান এই ন্যাশনাল থিয়েটার। সেখানে উত্তাল জনতার মাঝে গর্জন দিয়ে ৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সৌম্য ওয়ারহানি বলেন, আমি সত্যি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। সংবিধান লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটাতে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডকে ‘ক্ষমতা গ্রাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে শনিবার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে তিউনিসিয়ার ও বৈশ্বিক মানবাধিকার বিষয়ক প্রায় ২০টি সংগঠন। এতে স্বাক্ষরকারীরা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ডিক্রির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত ও পার্লামেন্ট স্থগিত করে প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করছেন। এটা পুরোপুরি সাংবিধানিক শৃংখলার পরিপন্থি ও সরাসরি কর্তৃত্ববাদ।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ২০১৪ সালে প্রণীত একটি সংবিধানের কপি দোলাতে থাকেন বেলগাসেন বুনারা। এই সংবিধানকে নতুন করে লিখার পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। রোববারের বিক্ষোভে যোগ দিতে রাজধানী তিউনিসে গিয়েছিলেন বেলগাসেন বুনারা। রাষ্ট্র হয়তো ভুলে গেছে, এমন একটি অতি দরিদ্র অঞ্চল তাতাউইনি থেকে গিয়ে তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি কম্পিউটার বিক্রি করেন। বলেছেন, কায়েস সাইদ সংবিধান ও আমাদের গণতন্ত্র থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছেন। তিনি আবার একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে যাচ্ছেন। তার প্রতিবাদে তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ শে জুলাই সরকারকে বরখাস্ত করে পার্লামেন্ট স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। তারপর রোববার দ্বিতীয় বারের মতো বিক্ষোভ হলো।

তবে তার এই কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন আছে কিছু মানুষের। তারা মনে করেন, রাজনীতিতে বিকলাঙ্গতা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি অচল হয়ে আছে। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে খুব কমই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধান করতে হলে সরকারকে ক্ষমতা হাতে নেয়া প্রয়োজন। ফলে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদকে সমর্থনকারী ছোট্ট একটি গ্রুপ অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীদের বিপরীতে। তারা স্লোগান দিতে থাকেন- কায়েস সাইদই উত্তম।

আল জাজিরার কাছে আর্টিস্ট মোহামেদ খালেদ বলেছেন, ডিক্রি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তিউনিসিয়ার মানুষ চায় নির্ভেজাল, সৎ একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি জনগণের কাছ থেকে চুরি করবেন না। চারদিকে হতাশা। মানুষ চায় বাজারে গিয়ে ব্যাগভরে কেনাকাটা করতে। আর বাসায় ফিরে পেটপুরে খাবার খেতে। সাবেক পার্লামেন্টারি কর্মকর্তা চেরিফ এল কাদি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের কর্মকা- ঘৃণার যোগ্য। আমার মনে হয়, অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই বিক্ষোভ আরো গতি পাবে। ১০ বছর আগে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে। তার পরও দেশের রাজনৈতিক অভিজাতশ্রেণিকে নিয়ে দেশবাসী হতাশায়। এটা আমি পরিষ্কার বলতে পারি। ১০ বছর আগের বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় কায়েস সাইদের প্রতি দেশবাসী আস্থা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন সাবেক আইনের একজন প্রফেসর। কিন্তু তিনি সেই আস্থা ধরে রাখতে পারছেন না। ফলে সামনের সপ্তাহ ও মাসগুলোতে এই বিক্ষোভ, বিরোধিতা আরো শক্তিশালী হবে।

তিউনিসিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল উদারপন্থি ইসলামিস্ট ইন্নাহদা প্রেসিডেন্ট সাইদের উদ্যোগকে গণতান্ত্রিক বৈধতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ এক অভ্যুত্থান বলে এর নিন্দা জানিয়েছে। তারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াতে ক্লান্তিহীন ও শান্তিপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর