× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে নিজের বাইক পুড়িয়ে দিলেন শওকত

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার

শওকত আলী ছিলেন ব্যবসায়ী। ঢাকার কেরানীগঞ্জে তার একটি স্যানিটারি পণ্যের দোকান ছিল। দোকানের আয় দিয়ে তার সংসার ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। প্রায় দেড় বছর ধরে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। এরপর থেকে দিশাহারা ছিলেন। পরে জীবিকার তাগিদে নামেন রাইড শেয়ারে। কিছুদিন ধরে রাইড শেয়ার করেই সংসারের খরচ চালিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু সেটিও গতকাল বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাফিক সার্জেন্টের বারবার মামলায় অতিষ্ঠ ছিলেন শওকত। গতকালও তিনি ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে ধরা খেয়েছিলেন। যদিও মামলা দেয়ার আগেই তিনি নিজেই তার বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে বাড্ডা থানা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শওকত জানিয়েছেন, নিজের ওপর ক্ষোভ থেকে তিনি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। সড়কে শওকত আলীর বাইক পুড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা। অনেকেই এ ঘটনাটিকে মর্মান্তিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, সড়কে সার্জেন্টের হয়রানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কারণে-অকারণে মামলা দেয়া হচ্ছে চালকদের। শওকত আলীর খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর কেউ কেউ তাকে নতুন বাইক কিনে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড্ডা লিংক রোডের জনতা ইন্স্যুরেন্সের সামনে যাত্রীর অপেক্ষা করছিলেন শওকত। অফিস টাইমে রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যায়। তবে মামলা না দিয়ে কাগজপত্র ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানান শওকত। কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরসাইকেলের কাগজপত্র শওকতের কাছে চান। তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেই মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার মোটরসাইকেলটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে শওকত ও তার পুড়ানো বাইকটি উদ্ধার করে বাড্ডা থানায় নেয়া হয়। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সে কি কারণে এমন কাজ করেছে- এ বিষয়ে পুলিশ জানতে চেয়েছে।
শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমার ক্ষতি আমিই করেছি। আমার মোটরসাইকেল আমি জ্বালাইছি। পুলিশের দায়িত্ব ছিল গাড়ি  থানায় নিয়ে আসা। তারা নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, অন্যায় কিছু করিনি। আমি সেখানে দাঁড়ানোর জন্য মামলা দিতে চেয়েছিল। আমি সামনে এসে দাঁড়িয়েছি, অনুরোধ করছি মামলা না দিতে। তারপরও মামলা দিতে চেয়েছিল। তখন আমি বলেছি মামলা দেন, আমি আর গাড়ি চালাবো না। তাই পুড়িয়ে দিয়েছি। গত সপ্তাহেও মামলা দিয়েছে।
বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাইড শেয়ার করে জীবনযাপন করলেও বিষয়টা নিয়ে তিনি মনে মনে বিরক্ত এবং ক্ষিপ্ত ছিলেন। আগেও রাজধানীর পল্টনসহ একাধিক জায়গায় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার কারণে ট্রাফিক পুলিশের হাতে মামলা খেয়েছেন। এ জন্য কাগজপত্র চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এ কাজ করেছেন। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে শওকত জানিয়েছেন, নিজের মনের ক্ষোভ থেকেই তিনি ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বা অন্য কারও দোষ নেই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানে আগে থেকেই ট্রাফিক সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া ছিল। সকালবেলা কেউ যেন সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে না দাঁড়ায়। কারণ অফিস আওয়ারে ওই রোডে যানজট হয়। মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখলে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে রাইড শেয়ারিংয়ের একটি মোটরসাইকেল দাঁড়ালে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা চালকের কাছে কাগজপত্র দেখতে চান। কিন্তু ওই চালক কাগজপত্র না দেখিয়ে উল্টো রেগে গিয়ে নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। অন্যদেরকে মামলা দেয়া হলেও তাকে কোনো মামলা দেয়া হয়নি।

কর্মবিরতির ডাক: ট্রাফিক পুলিশের দেয়া মামলার কারণে বিরক্ত হয়ে নিজের মোটরসাইকেলে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরানোর পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার ছয় দফা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে পাঠাও-উবারের সংগঠন অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, বাড্ডার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মাহুতি দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে? কর্মবিরতির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা কয়েকটি দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করেনি। আমরা ষষ্ঠবারের মতো আন্দোলনে যাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। কোনো ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী নই আমরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর