× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

কান্না থামেনি রায়হানের পরিবারে

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১০ অক্টোবর ২০২১, রবিবার

রায়হানের ছোট্ট মেয়ে আলফা। বয়স এখন ১৪ মাস। এক বছর আগে যখন তার পিতা রায়হান আহমদ খুন হন তখন বয়স ছিল দুই মাস। এখন বয়সে বছর পেরোনো আলফা হাঁটতে পারে। একটু-আধটু কথাও বলতে পারছে। উঠোনে হেঁটে বেড়ায়। আর মুখে ফুটেছে ‘বাবা’ ডাক। ‘বাবা, বাবা’ বলে সব সময় ডাক পাড়ে।
কিন্তু কোথাও নেই বাবা। আর এ দৃশ্য দেখে কাঁদছেন রায়হানের মা সালমা বেগম। ‘বাবাকে কই পাবো- ওরা তো মেরে ফেলেছে’- বলে কাঁদছেন সালমা বেগমও। সিলেটের আলোচিত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। গত বছরের এই দিন শেষে রাতে নগরীর কাস্টঘর থেকে রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছিল বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ। এরপর রাতভর তারা ফাঁড়িতে রেখেই নির্যাতন করে রায়হানকে। ওই সময় রায়হানের আর্তনাদ শুনেছেন আশেপাশের লোকজনও। ভোরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন। রায়হানের মৃত্যুকে প্রথমে পুলিশ গণপিটুনিতে মৃত্যু বলে প্রচার করলেও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়; সুস্থ অবস্থায় ওইদিন মধ্যরাতের পর রায়হানকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। আর যখন তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল তখন অসুস্থ রায়হানকে দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে সিএনজি অটোরিকশাতে তোলা হয়েছিল। ফলে রায়হান হত্যার ঘটনাটি মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। ঘটনার জন্য পুলিশকেই দায়ী করে পরিবার। পরে পরিবারের দাবিরই সত্যতা মিলে। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবরসহ পুলিশ সদস্যরাই নির্যাতন চালিয়ে খুন করে রায়হানকে। ইতিমধ্যে তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশি তদন্তে অভিযুক্ত হয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদ এখন কারাগারে রয়েছে। অপর আসামি কোম্পানীগঞ্জের নোমান ভারতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, নোমান ভারত থেকে ইউরোপের পথে পাড়ি দিয়েছে। নোমান কোম্পানীগঞ্জে সাংবাদিকতা করতো। এর সূত্র ধরে এসআই আকবরের সঙ্গে তার সংখ্যতা গড়ে উঠেছিল। ১১ই অক্টোবর ঘটনার পর নোমানকে নিয়ে ১২ই অক্টোবর কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল এসআই আকবর। এ কারণে আকবরকে ধরতে সিলেটে আন্দোলনে নেমেছিল জনতা। পরে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশনায় কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। আকবরসহ গ্রেপ্তারকৃত ৫ পুলিশ সদস্য ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে বক্তব্য দিয়েছে। এদিকে চলতি মাসে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। এখন মামলাটি বিচারে যাবে। তার আগে আদালত পলাতক থাকা আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তার মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটি বিচারে যাবে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। এদিকে কারাগারে থেকেও রায়হানের পরিবারকে নানা প্রলোভন দিয়ে বিভ্রান্ত করছে বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবরসহ আসামি পুলিশ সদস্যরা। রায়হানের পরিবারের ভরণ-পোষণ ও স্ত্রীকে বিয়ে করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কারাগারে থাকা আকবর। রায়হানের পরিবার তার এই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়ে বলেছে, ‘রায়হানকে ফিরিয়ে দাও।’ বিভাগীয় মামলার সাক্ষ্য দিতে আসামিদের সামনে গেলে রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহর পায়ে ধরেও এসআই আকবর ও আসামিরা কান্নাকাটি করে। রায়হানের মা সালমা বেগম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘ঘটনার পরপরই দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু এক বছরে এসে কেবল চার্জশিট গ্রহণ হয়েছে। জানি না বিচার শেষ হতে কতোদিন লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘মামলার আসামিদের কারান্তরীণ রেখে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। নতুবা ওরা জামিন পেলে আমরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বো। এ কারণে আমাদের দাবি হচ্ছে; দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা।’ রায়হান হত্যার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার বিচার কাজ সমাপ্ত ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ দুপুরে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর