দীর্ঘদিন ধরেই ট্রফি খরা বাংলাদেশের ফুটবলে। সেই ২০০৩ সালে সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ, এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৮টি বছর। আর ট্রফির দেখা মেলেনি। সাফের শেষ চার আসরেতো সেমিফাইনালেই খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সুযোগ এসেছে ১৬ বছরের খরা কাটানোর। আজ মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল পাঁচটায় শুরু হওয়া এই ম্যাচে নেপালকে হারাতে পারলেই ২০০৫ সালের পর সাফের ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। প্রথম বারের মতো ফাইানলের সুযোগ আছে নেপালেও। জামাল-তপুদের বিপক্ষে মাত্র এক পয়েন্ট ঝুলিতে ভরতে পারলেই প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনাল নিশ্চিত হবে কিরণ লিম্বুদের।
সাফ গেমসের ফুটবলে একাধিকবার সোনা জিতেছে নেপাল। কিন্তু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কেন যেন কখনোই শিরোপা জেতা হয়নি তাদের। এমনকি একটি বারের জন্য ফাইনালও খেলতে পারেনি হিমালয়ের দেশটি। এবার মালেতে তাদের শুরুটা দারুণ হয়েছে। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক মালদ্বীপকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট তুলে নেওয়া নেপাল হেরেছে ভারতের কাছে। সব মিলিয়ে এবার সাফ জয়ের একটা বড় সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে নেপাল। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনোরকম এক পয়েন্ট তুলতে পারলেই প্রথমবারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করে ইতিহাস রচনা করবে তারা।
অপরদিকে ২০০৩ সালে একবারই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ ১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে। সেমিফাইনালের হতাশায় পুড়তে হয়েছে ১৯৯৫ ও ২০০৯ সালে। ২০১১ সালের পর থেকে সাফে বাংলাদেশের দৃশ্যপটটা গেছে পুরোপুরি পাল্টে। সবশেষ চারটি সাফে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সবচেয়ে হতাশার ছিল ২০১৮ সালে। গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পর নেপালের বিপক্ষেই হয় স্বপ্নভঙ্গ। গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেলের অমার্জনীয় ভুলে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পর নেপালের কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। এমন একটা অতীতকে সঙ্গে নিয়ে মালেতে এসে বাংলাদেশ একেবারে মন্দ করেনি। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে হারানোর পর ১০ জন নিয়ে খেলেও ভারতকে ১-১ গোলে রুখে দেয় জামাল-তপুরা। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে শেষ ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে হেরে। তবে ভারতের কাছে নেপাল হেরে যাওয়ায় সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে। ফুটবল ইতিহাসে যে ক’টি দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের, সেই নেপালের বিপক্ষেই অঘোষিত সেমিফাইনাল। তবে জিততে হবে। জিতলে ২০০৫ সালের পর ফাইনাল। দেশের ফুটবলকে আবারও সাফল্যের রাস্তায় নিয়ে আসতে এ ফাইনালের বিকল্প নেই। সংবাদ সম্মেলনে সেটাই বারবার বলেছেন অস্কার ব্রুজন। এই টুর্নামেন্টের জন্য দায়িত্ব নেয়া ব্রুজন জানিয়েছেন নেপালের বিপক্ষে জয়টা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। জামাল-তপুরাও উপলদ্ধি করতে পেরেছেন তাদের জন্য এই জয়টা কতো গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল হ্যানভেরুর গাসের মাঠে অনুশীলন শেষে তপু বলেন, আমরা একটা জিনিসই বুঝি সেটা হলো এই ম্যাচ আমাদের জিততে হবে। জেতাটা দেশের জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন আমার জন্য। এতোদিন ধরে ফুটবল খেলছি। কি অর্জন আছে আমার? একটা ট্রফি জিততে না পারলে ক্যারিয়ার শেষে আগামী প্রজন্মের কাছে কি জবাব দেবো? অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও জানালেন তেমন কথা। দেশের ফুটবলের জন্য জয়টা খুব প্রয়োজন। জামাল-তপুদের এই উপলদ্ধি যদি মাঠে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায়। তাহলে আজ নতুন কিছু হলেও হতে পারে।