একবছর বা দু’ বছর নয়। দশকের পর দশক দেখা নেই। অঙ্কের হিসাবে পঁয়তাল্লিশ বছর। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে গেলে পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়... হয়তো সেই পুরানো স্মৃতির রসাস্বাদনে ছুটে গেছেন এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছে। বলছি রাজনীতিতে রহস্যপুরুষ বলে পরিচিত সিরাজুল আলম খান ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কথা।
লেখক ও রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ তার ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ১৯৬২ সাল। ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেক্রেটারি শেখ ফজলুল হক মণি, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সিরাজুল আলম খান, কালচারাল সেক্রেটারি মাহবুব তালুকদার। মাহবুব তালুকদার আবার ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার এবং ছাত্রলীগের একুশে সংকলনের সম্পাদক।
তার সঙ্গে দু’জনের ‘তুই সম্পর্ক, শেখ মণি আর সিরাজুল আলম খান। ঘনিষ্ঠ বন্ধু তারা।
শেখ মণি আর নেই। মাহবুব আর সিরাজ পরস্পরের সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলার আগ্রহ দেখালেন। আমি হলাম অনুঘটক।
কাল বিকালে (বুধবার) মাহবুব তালুকদার আমার বাসায় এসে আমাকে তুলে নিয়ে গেলেন সিরাজুল আলম খানের কাছে। বন্ধুর জন্য বই আর ফল নিলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ও কি মিষ্টি খায়? বললাম, সব খায়। ডায়াবেটিস নেই। পথে পড়ল বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। বন্ধুর জন্য কিনলেন সন্দেশ।
সকালেই খবর দিয়েছিলাম, শেষ বিকালে আমরা দু’জন আসবো। ঘরে ঢুকেই দু’জন দু’জনের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। ‘কীরে, কেমন আছিস’ বলে কথা শুরু। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর দেখা হলো দু’জনার। তৈরি হলো এক আবেগঘন পরিবেশ। দু’জন দু’জনের মুখে সন্দেশ তুলে দিলেন। তারপর ঘণ্টাখানেক আড্ডা, কফি পান, স্মৃতিচারণ। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা- তাঁদের বন্ধুদের আর কে কে বেঁচে আছেন, কোথায় আছেন। আমি একটা অসম্ভব সুন্দর সন্ধ্যার সাক্ষী হয়ে থাকলাম। জানি না, তাঁদের দু’জনের আবার দেখা হবে কি না। দু’জনেই আশি পেরিয়েছেন। ভগ্ন স্বাস্থ্য। ছলছল চোখে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিলেন তাঁরা।