হাতে প্ল্যাকার্ড। নানা স্লোগান। এরমধ্যে একটি স্লোগান নজর কাড়ে সবার। এতে লেখা রয়েছে; ‘১ কোটি ২০ লাখ টাকার সিলেট ছাত্রলীগ নিহত।’ সিলেটের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী হাতে হাতে এই প্লেকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শহীদ মিনারের সামনের মানববন্ধনে। প্লেকার্ডের এমন লেখা নিয়ে সিলেটে সব মহলেই আলোচনা চলছে। টাকায় কেনা কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তষ বিরাজ করছে। এ কারণে সিলেট ছাত্রলীগের বঞ্চিতরা এখন মাঠে সরব। লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করেছেন।
গতকাল তারা সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানবন্ধন করেন। এর আগে মঙ্গলবার থেকে তারা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। দীর্ঘ ৪ বছর পর গত মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। ৪ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি ঘোষণার পর থেকে সিলেটে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন তেলীহাওর গ্রুপের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন টিলাগড় ও চৌহাট্টা বলয়সহ কয়েকটি বলয়ের নেতারাও। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নবগঠিত সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্তে অনড় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা। ঘোষিত কমিটি বাতিল কিংবা বিলুপ্ত হবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তারা দায়িত্ব পাওয়া বলয় নেতাদের নিয়ে সিলেটে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিলেটের ঘোষিত কমিটির ৪ নেতাকে নিয়ে শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খুব দ্রুত দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ নেতাকে সিলেটে এসে মাজার জিয়ারতসহ কর্মসূচি শুরু করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এতে করে সিলেটের পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করে সিলেটে নতুন কমিটি কার্যক্রম শুরু করলে রাজপথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বাসায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা এখনো সমঝে নিচ্ছেন না সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, এই কমিটি ঘোষণায় তাদের মতামত নেয়া হয়নি। এ কারণে তারা সমঝে নিচ্ছেন না। এখনো তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ছাত্রলীগ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা ঘোষিত কমিটির নেতাদের এড়িয়ে চলছেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়া টিলাগড়ের রঞ্জিত বলয়, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়া দর্শনদেউরী বলয় ও মহানগর ছাত্রলীগের পদ পাওয়া কাস্মির বলয়ের নেতারা আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। ওই ৩ বলয়ের নেতারা পদ পাওয়ায় সন্তুষ্ট। তারাও ভেতরে ভেতরে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা আপাতত তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। বলয় নেতারা জানিয়েছেন, টাকা লেনদেনের অভিযোগ আসার পর থেকে অনেকেই চুপ হয়ে গেছেন। এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি সিলেট ছাত্রলীগে। এমনকি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কিংবা সহযোগী কোনো সংগঠনে এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ফলে এবারের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় এমন অভিযোগ ওঠার কারণে সবাই বিব্রত। এজন্য তারা ঘটনাটির তদন্ত দাবি করেছেন। বঞ্চিত অংশের নেতারা গতকাল সিলেটের শহীদ মিনারের সামনে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন শেষে সমাবেশে জানিয়েছেন, যে অভিযোগ উঠে এসেছে সেটির প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। টাকা লেনদেন ছাড়া হঠাৎ করে কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসতে পারে না। অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা যোগ্যতা থাকার পরও পদে আসতে পারেননি। আবার অনেকেই যোগ্য নয়, এমন লোকদেরও পদে আসীন করা হয়েছে। তাদের নিয়ে বিতর্কেরও অন্ত নেই। কেউ কেউ বহু মামলার আসামি আবার দেশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের পরিবারের সদস্যরাও এসেছে কমিটিতে। আর এসব সম্ভব হয়েছে টাকার কারণে। এজন্য তারা অবিলম্বে ঘোষিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বঞ্চিত অংশের নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটের কমিটি নিয়ে কোনো দায়ভার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নিতে চাইছেন না। তারাও নীরব রয়েছেন। সুতরাং যদি কমিটি নিয়ে সিলেটে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভাবে নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সিলেটে ছাত্রলীগ বিতর্কিত হোক স্থানীয় কেউ চান না। এ কারণে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধারাবাহিক আন্দোলনে রয়েছে। কিন্তু বাধা দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি জানান তারা। কমিটি বিলুপ্ত না হলে তাদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান। ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাপ্পীর সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ জায়গীরদারের পরিচালনায় মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতা আশফাক আহমদ মাসুদ, মুহিবুর রহমান, মুশফিকুর রহমান রুনু, জঙ্গিনুর আহমদ জীবাল, শহীদুল ইসলাম সৌমিক, দীপ্ররাজ দাশ দীপায়ন প্রমুখ।