অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবার সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাচ্ছেন। এ মাসের শেষের দিকে ব্রুনেইয়ে অনুষ্ঠেয় এসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশন্সের (আসিয়ান) বার্ষিক সম্মেলনে এর সদস্য দেশগুলোর সব সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু বাদ পড়েছেন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। ওই সম্মেলনে তার পরিবর্তে মিয়ানমারের অরাজনৈতিক প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানাতে একমত হয়েছে আসিয়ান। ১০ সদস্যের এই ব্লকের জন্য এটা এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ। ব্লকের নীতিই হলো সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করা। সেক্ষেত্রে সেনাপ্রধান থেকে সামরিক জান্তায় পরিণত হওয়া জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে আমন্ত্রণ না জানানো একরকম অসম্মান হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসিয়ানের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সামরিক জান্তা।
জবাবে আসিয়ান বলেছে, মিয়ানমারের টালমাটাল পরিস্থিতির ইতি ঘটাতে যথেষ্ট করেনি সেনাবাহিনী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
১লা ফেব্রুয়ারি বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে সরিয়ে দিয়ে গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। এরপর আগস্টে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন। ঘোষণা দেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিশিয়াদের লড়াই যতদিন অব্যাহত থাকবে দেশে ততদিন জরুরি অবস্থা থাকবে। আসিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, শুক্রবার আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন। তারা এদিন ২৬ থেকে ২৮ শে অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আসিয়ানের বার্ষিক সম্মেলনে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে একমত হতে পারেননি। আসিয়ান বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক নেতারা সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমনের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। তাছাড়া তারা ক্ষমতাচ্যুত ও কারাবন্দি নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে এই গ্রুপের সদস্যদের সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
শুক্রবারের মিটিংয়ের পর এই বিবৃতি ইস্যু করেছে ব্রুনেই। তারাই এই সম্মেলনের আয়োজক। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে আঞ্চলিক নিরাপত্তায়। একই সঙ্গে তা আসিয়ানের একতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কেন্দ্রীয় প্রবণতায়ও প্রভাব ফেলেছে। এপ্রিলে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের প্রতি দেশে সহিংস দমনপীড়ন বন্ধ করার আহবান জানায় আসিয়ান। দাবি জানায় রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে। ব্যাংককে অবস্থানরত বিবিসির সাংবাদিক জোনাথন হেড বলছেন, এই সম্মেলনে যোগ দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও অন্যান্য বিশ্বনেতা। সেখান থেকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে একটি কঠিন আঘাত। তবে এখনও বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রশমিত করা বা কমিয়ে আনার কোনোও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই সম্মেলনে মিয়ানমারের কোন পর্যায়ের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে, তা এখনও নিশ্চিত করেনি আসিয়ান।