দেড় বছর পর গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশের সঙ্গে খুলেছে গাজীপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর প্রায় এক মাস ক্লাস শেষে ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ২১ শতাংশ ও মাধ্যমিক স্তরের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হদিস মিলছে না। অবশ্য স্বাভাবিক জীবনে থাকা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের স্কুল-মাদ্রাসায় ফেরানোর চেষ্টা রয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের। শহরে কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ায় অভাব-অনটনে পড়ে শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ কর্মমুখী হওয়ায় এবং বাল্যবিবাহের কারণে উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলছেন, স্কুলের তুলনায় মাদ্রাসায় উপস্থিতির সংখ্যা তুলনামূলক কম রয়েছে। এখনই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। এই অনুপস্থিতির সংখ্যা ঝরে পড়ার সংখ্যা নিশ্চিত করছে না। আগামী নভেম্বর মাসে পরীক্ষা শুরু হলেই এর প্রকৃত চিত্র জানা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে গত ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত উপস্থিত সংখ্যা ৪৮ হাজার ৭৭ জন। এদের মধ্যে একদিন কেউ অনুপস্থিত থাকলেও অন্যদিন আবার উপস্থিত থাকছে। আর তাতে এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬০ জন। এ তথ্যে গত একমাসে উপস্থিতি পাওয়া গেছে মোট শিক্ষার্থীর ৭৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তিনি হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানায়, গাজীপুরে করোনার আগে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৬০ হাজার ১৩৭ জন। দেড় বছর পর গত ১০ই অক্টোবর উপস্থিত হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৭ জন। আর অনুপস্থিত রয়েছে ১২ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলার শিক্ষার্থী ছিল ১৬ হাজার ৪৮৪ জন। করোনার পর বর্তমানে স্কুলে আসছে ১২ হাজার ১৩৫ জন। কালীগঞ্জ উপজেলার ৭ হাজার ৪৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৬ হাজার ১৭০ জন। কাপাসিয়া উপজেলার ৯ হাজার ৫১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৮ হাজার ৬০৩ জন। শ্রীপুর উপজেলার ১৫ হাজার ১৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ১১ হাজার ৯৭২ জন। কালিয়াকৈর উপজেলার ৯ হাজার ৯০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৭ হাজার ৬৩৭ জন। এছাড়া টঙ্গীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৪২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮০ জন। আর প্রাথমিকের তুলনায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি আরও বেশি। তাদের মধ্যে ছাত্রীদের একটি অংশ বাল্যবিবাহের কারণে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজীপুর জেলা মাধ্যমিক অফিস সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ১০ই অক্টোবরের হিসেব মতে গড়ে গাজীপুর সদর এলাকায় শতকরা ৮০ ভাগ, শ্রীপুর উপজেলায় ৬৫ ভাগ, কাপাসিয়া উপজেলার ৬০ ভাগ, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৮০ ভাগ ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭৯ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে। আর এতে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী করোনার পর থেকে অনুপস্থিত রয়েছে। তবে এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণ চিহ্নিত করে তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সচেতন সমাজ।