২. স্বঘোষিত ড্রিমল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট এক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলো 'হঠাৎ করে ইন্টারনেটের কী হলো? কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা? সাইবার হামলা? বিশেষ কোন কারণ?' উত্তরে তিনি বললেন ' আমি কিছুই জানি না।
৩. উত্তরটা তিনি না জানলেও সাধারণ নাগরিকরা ঠিকই জানতেন। তারা বলাবলি করছিলেন যে, সন্ধ্যার দিকে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তারা জানেন কাজটি কে করেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে সন্ধ্যার দিকে ঠিকই ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। সাধারণ মানুষের কল্পনাশক্তি দেখে আমি নিজেই বেকুব হয়ে গেলাম! ড্রিমল্যান্ডর মানুষের কল্পনা শক্তি প্রখর!
৪. প্রশ্ন হচ্ছে, যে প্রশ্নের উত্তর সাধারণ জনগণ জানেন না তা মন্ত্রী মহোদয় জানেন না কেন? সাধারণ লোকজন ধারণা করছেন যে, মন্ত্রীমহোদয় ঠিকই জানেন, কিন্তু বলছেন না। সঠিক কারণ কেন বলেন নি? মানুষকে বেকুব করে কী লাভ? নাকি বেকুবদের কিছু বলতে নেই?
৫. একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। যদি বলা হতো, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। এই কথাগুলো বললে সরকারের কোনো ক্ষতি হতো? লোকজন ভাবতে শুরু করতো যে, রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরও একটি অংশ আছে, তারা ক্রীতদাস নন।
৬. যাদেরকে সেবা করার কথা বলে দায়িত্ব নিয়েছেন তাদেরকে কিছু বলার গরজ অনুভব করেন? গরজ অনুভব করবেন না তখনই যখন মনে করবেন যাদের সাথে কথা বলবেন তারা আকারে অবয়বে স্বাধীন মানুষ হলেও কার্যত পরাধীন , অনেকটা বাজার থেকে কিনে আনা ক্রীতদাসের মতো। ক্রীতদাসদের কাছে মনিবের কিছু ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই, উনারা শুধুমাত্র আদেশ করবেন। আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুললে বা বিরোধিতা করলে পরিণতি কী হবে তা অবশ্য আগেই বলে দেওয়া আছে। লোকজন তাই হাত পা গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। মুখে লাগানো থাকে স্কচটেপ। নিজেকে প্রশ্ন করেন এটা কি ড্রিমল্যান্ড না বেকুব ল্যান্ড?
৭. ইন্টারনেট দিয়ে কি সবাই শুধু ফেসবুক চালান? স্ট্যাটাস আর কমেন্ট দেন? বাকি কোনো কাজ করা হয় না? ডিজিটাল দেশের তো সবকিছু এখন ডিজিটাল বলে দাবি করা হয়। তাহলে ফেসবুকের বাইরেও লোকজনের মধ্যে যারা চরম অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছেন তাদের কাছে কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করার সংস্কৃতি কি আছে? একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমা চাওয়ার এ সংস্কৃতি চালু আছে। তবে আপনি যদি দাস ল্যান্ডে থাকেন তাহলে তা আশা করতে পারেন না।
৮. লেখাটি একটি কল্পজগতের মানুষদের নিয়ে। বাস্তবের কোনো ল্যান্ডের সাথে সাথে মিল খুঁজে পেলে তা হবে নিতান্তই একটি কাকতালীয় ব্যাপার। আপনি অবশ্য নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি কি ড্রিমল্যান্ডে না বেকুব ল্যান্ডে আছেন!
---
ডা: আলী জাহান।
কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাবেক পুলিশ সার্জন, যুক্তরাজ্য পুলিশ।