× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

টিআইবি’র গবেষণা / প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নানা বৈষম্যের শিকার

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সমূহের জীবন-মান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বিভিন্ন সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে বাধা, বৈষম্য ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
‘সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা: জবাবদিহি ব্যবস্থার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করার পাশাপাশি সংকট উত্তরণে ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেছে সংস্থাটি।
অক্টোবর ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১ সময়কালে গুণবাচক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিমাণবাচক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আদিবাসী, এসিড সন্ত্রাসের শিকার, দলিত, চা বাগান শ্রমিক, হিজড়া জনগোষ্ঠীদের অন্তর্ভুক্ত করে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ সংবিধানে নাগরিকের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যের কারণে অধিকার ও সেবা প্রাপ্তিতে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না উল্লেখ করা হলেও, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ‘খসড়া বৈষম্য বিলোপ আইন’ এখনো পাস হয়নি। আবার খসড়া আইনে অভিযোগ অনুসন্ধানকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জবাবদিহি করার বিষয়টি উল্লেখ নেই। অন্যদিকে, তদন্তের স্বার্থে ‘সময় বর্ধিত’ করা এবং ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণে মামলা মুলতবির সুযোগ আইনে দেয়া আছে, যার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা খসড়া আইনে অনুপস্থিত। এর ফলে মামলা সম্পন্ন হতে দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ থাকে। বৈষম্যবিরোধী আইন না থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মামলা দায়ের করতে না পারার মতো বিষয় এই গবেষণায় উঠে এসেছে। আইনগতভাবে সকল আদিবাসীর পরিচয় ও তাদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন থাকলেও সমতলে বসবাসরত বৃহৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে ভূমি কমিশন নেই।

গবেষণা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং নীতিমালা, ২০১৫-এ এসিড সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে সরাসরি নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। এছাড়াও নির্বাচন কমিটি কার কাছে জবাবদিহি করবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা আইনে নেই। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ আদিবাসী ভাষার বই বিতরণ, এর পাঠদান নিশ্চিত, শিক্ষক চাহিদা নিরূপণ ও তাদের প্রশিক্ষণ তদারকির বিষয়টি অনুল্লেখিত থাকায় তদারককারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায় না। শ্রম আইন, ২০০৬ এবং শ্রম বিধিমালা, ২০১৫-এ চা শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো বাগান কর্তৃপক্ষ প্রদান করতে অপারগ হলে শুধুমাত্র বাগান কর্তৃপক্ষই তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে অবহিত করার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে, বাগান মালিক বা বাগান কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকরা এই বিষয়ে জবাবদিহি ব্যবস্থার আওতায় আনতে পারে না।
গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে সাড়া প্রদানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কার্যক্রম ইতিবাচক ভূমিকা পালন  করে। অন্যদিকে সরকারি সেবার ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা যায়। যেমন- প্রান্তিক পরিচয়ের কারণে অভিযোগ দাখিল করতে না পারা, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে সমাধান না পাওয়া,  বিদ্যালয়ে ‘মূলধারার’ সহপাঠী ও শিক্ষকদের বর্ণবাদমূলক আচরণের অভিযোগে সমাধান না পাওয়া, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে শিক্ষকদের বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়া, ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েও সহযোগিতা না পাওয়া, অভিযোগ দাখিলের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। দেখা গেছে, মধুপুরে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলায় উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অবজ্ঞা করে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ দখলমুক্ত করা ও সামাজিক বনায়নের নামে আদিবাসীদের বসতভিটা ও আবাদি জমিতে বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার প্রমাণ রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেবা প্রদানের জন্য এবং অভিযোগ দায়েরের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে যেটি অন্তর্ভুক্তিমূলক না হওয়ায় সেবা প্রাপ্তি থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হন। বঞ্চিত হওয়ার পর যদি অভিযোগ দায়ের করেন, তখন তারা বাধাগ্রস্ত হন কিংবা প্রতিকার পান না। বরং অনেক সময় অভিযোগ উত্থাপন করলে হুমকির সম্মুখীন হন। এক্ষেত্রে আমরা দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করেছি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাংশ মূলত প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে এবং তাদের মানসিকতাও অনেক সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক।
এসব সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়। এর মধ্যে বিভিন্ন সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দূর করা এবং বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা; সকল প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও নিয়মিত হালনাগাদ করা; সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে এবং সকল গণমাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের ভাষায় যথাযথ এবং নিয়মিত প্রচার পরিচালনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রচার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি অংশীজনদের সম্পৃক্ত করা; সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ কাঠামো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী-বান্ধব করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে মৌখিক অভিযোগ গ্রহণ ও তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা ও সমাধানে নিয়মিত ফলোআপ করা; সরকারি প্রতিষ্ঠানের গণশুনানিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে আলাদা সময় বরাদ্দ এবং সমস্যা প্রকাশে উৎসাহিত করা ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ এসোসিয়েট (কোয়ালিটেটিভ) মো. মোস্তফা কামাল এবং গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেন একই বিভাগের সিনিয়র ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্‌?জুর-ই-আলম।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর