× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৬ বছরে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩,৮৫৬

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার
ফাইল ছবি

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ ৬ বছরে সারা দেশে ৩১ হাজার ৭৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯১ হাজার ৩৫৮ জন। এ ছাড়া ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণে বছরব্যাপী লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায়ও ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও ৮ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল ‘নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২১’ উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জন নিহত হয়েছেন ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়েছেন। ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন নিহতও ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত হয়েছেন।
২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত ও ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছেন। ২০২০ সালে ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, টানা তিনবারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী নানা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলেও তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গাফিলতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। ১৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হচ্ছেন। জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালকে সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করে সদস্য দেশগুলোর সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির বাজেট বাড়ানো, গবেষণা, সভা-সেমিনার, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে গণসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন আটকে থাকা ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুত চালকের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা এবং সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে এসব সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি ২৯৭৮০ কোটি টাকা
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পুরো বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, গত দুই বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। পুলিশের তথ্যমতে ২০১৯ সালে তিন হাজার ৯৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন চার হাজার ৩৫৮ জন। আহত হয়েছেন আট হাজার ২৪০ জন। ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি ৩৮ হাজার কোটি টাকা। যা আমাদের জিডিপির দেড় শতাংশ। ২০২০ সালে এই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ (বিআই) ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টার (ডিটিসি) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।
অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই তিন মাসে ২৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে কুয়াশা থাকার কারণে দুর্ঘটনাও বেড়ে যায়। মুখোমুখি দুর্ঘটনার চেয়ে পেছন থেকে আঘাতের ঘটনা ঘটছে বেশি। আর এসব সড়ক দুর্ঘটনায় যুবকদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এভাবে চললে চলতি বছরের সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি ২০১৯ কেও ছাড়িয়ে যাবে। হাদিউজ্জামান বলেন, বুয়েটের গবেষণা বলছে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ বছরের নিচে তরুণ প্রজন্মের মৃত্যুহার বেশি। কারণ তরুণদের বেশির ভাগই মোটরসাইকেল আরোহী। আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুযোগ হারিয়ে ফেলেছি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অপার সম্ভাবনা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। গবেষণা বলছে, মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার পরিমাণ ২০১৯ সালে ছিল ২০ দশমিক ২ শতাংশ। সেটা এখন ২৩ শতাংশে চলে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্যান্সারের সেলের মতো এই যানের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মোটরসাইকেল চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। ২০১৬ সালে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল আট লাখ ২০২০ সালে, সেটা ৩২ লাখে দাঁড়িয়েছে। চার বছরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ঢাকাসহ দেশের ২২২ ব্লগস্পট যদি ঠিক করা হয় তাহলে দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশ কমে আসবে। তবে আমাদের দাবি অনুযায়ী, সর্বশেষ মাত্র ১২টি ঠিক করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধুমাত্র চালকদের দায়ী করলে হবে না। পথচারীও এখানে অনেকাংশে দায়ী। ফুটপাথ না থাকলে পথচারীদের ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। এ ছাড়া বেশকিছু নির্দেশনা আছে সেগুলো পথচারীরা মানেন না।
বক্তারা জানান, সড়ক নিরাপদ করতে হলে কমপক্ষে ৬৭ লাখ চালককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে করোনার সময়েও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ড্রাইভিং সেক্টরে যদি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী না আসে এবং চালকদের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই রোধ করা সম্ভব না। দেশে গাড়িচালক তৈরি হয় তার ওস্তাদের হাত-পা টিপতে টিপতে। এ ছাড়া চালকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নেই। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন চালকদেরকে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। মালিকদের দেয়া ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় বেপরোয়া গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুরনবী শিমু বলেন, বিআরটিএ’র মাত্র ২০০ জন প্রশিক্ষক আছেন। সরকার ১৪০০ প্রশিক্ষক তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ৮০০ প্রশিক্ষক তৈরি হয়েছে। সংলাপে অংশগ্রহণ করেন- বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক শহীদুল আজম, বিআরটিসি’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) শুকদেব ঢালী, ব্রি. জেনারেল (অব.) জিএম কামরুল ইসলাম, সেবক সভাপতি খান মো. বাবুল, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তাসনিয়া মেহরীন, ছিলেন ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ারের বাদল আহমেদ প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর