× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুমিল্লার ঘটনা / ইকবাল রিমান্ডে

প্রথম পাতা

জাহিদ হাসান, কুমিল্লা থেকে
২৪ অক্টোবর ২০২১, রবিবার

দেশব্যাপী বহুল আলোচিত কুমিল্লা নগরীর একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড ইকবাল হোসেনসহ চারজনের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার দুপুরে মাথায় হেমলেট ও বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট পরিয়ে কড়া প্রহরায় তাদের কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মিথিলা জাহান উর্মির আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইকবাল হোসেন কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর সংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর (লস্কর পুকুরপাড়) এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নুর আহমেদ আলমের ছেলে। এছাড়াও রিমান্ড প্রাপ্ত অপর আসামিরা হচ্ছে, পুলিশকে ৯৯৯ এ ফোন করা ইকরাম, দারোগা বাড়ি মাজার মসজিদের সহকারী খাদেম ফয়সাল ও হুমায়ুন। পুলিশ সূত্র  বলছে মণ্ডপে কোরআন রাখার বিষয়ে সে এরই মধ্যে স্বীকার করলেও নেপথ্যের ইন্ধন দাতাদের বিষয়ে একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছে।
আদালত প্রাঙ্গণে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় আার শুক্রবার দুপুর থেকে দফায় দফায় পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক টিম ও গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল হোসেন মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখা এবং হনুমানের গদাটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে। তাই বিস্তারিত জানতে ও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ইকবালসহ ৪ জনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে।
ইকবাল ছাড়া অপর ৩ জন হচ্ছেন, ঘটনার দিন ৯৯৯-এ ফোন করা বজ্রপুর পুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে রেজাউল ইসলাম ইকরাম, মাজারের সহকারী খাদেম দারোগা বাড়ি এলাকার একেএম মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মো. ফয়সাল, বরুড়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের সানাউল্লার ছেলে হুমায়ুন কবির সানাউল্লাহ। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে রিমান্ডে তাদেরকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদের মধ্যে ইকরাম ডে-লেবার। তার মধ্যে দুটি মাদক মামলা রয়েছে।  
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে ইকবালকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় আনার পর ঢাকা থেকে আসা উচ্চ পর্যায়ের যৌথ তদন্ত টিম তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম। ইকবাল দারোগা বাড়ি মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে পাশের মণ্ডপে রেখেছিল বলে স্বীকার করে এবং মণ্ডপ থেকে হনুমানের মূর্তির গদা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরার পর গদাটি পুকুরে ফেলে দেয় বলে স্বীকার করলেও নেপথ্যের ইন্ধন দাতাদের বিষয়ে একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছে।
ঘটনার দিন কোতোয়ালি মডেল থানার এস.আই হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ও অবমাননার করার অপরাধে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় যে মামলাটি দায়ের করেন- ইকবালকে আটকের পর ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়াও পুলিশকে ৯৯৯-এ ফোন করা ইকরাম, দারোগা বাড়ি মাজার মসজিদের সহকারী খাদেম ফয়সাল ও হুমায়ুনকেও একই মামলায় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।  মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মফিজুল ইসলাম খান জানান, ইকবালসহ ৪ আসামিকে এ মামলায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন জানিয়ে গতকাল কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মিথিলা জাহান উর্মির আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আদালতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও ডিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।  
রিমান্ডে ৯৯৯-এ কল দেয়া ইকরামের সঙ্গে ঘটনার আগে-পরে ইকবালের কি কথা হয়েছিল তা জানতে চাওয়া হবে। সিসিটিভি ফুটেজে দারোগা বাড়ি মাজার মসজিদ থেকে কোরআন শরীফ নেয়ার বিষয়ে মসজিদের সহকারী খাদেমদ্বয়ের কোনো যোগসূত্র ছিল কিনা তাও রিমান্ডে তথ্য বের হয়ে আসতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ইকবাল ঘটনার দিন সকালেও মণ্ডপে হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিল, কিন্তু পরে সে ট্রেন যোগে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম ও পরে বাসযোগে কক্সবাজার চলে যায়। তাই কুমিল্লা থেকে কক্সবাজার যাওয়া, হোটেলে অবস্থান ও খাওয়ার অর্থ ও পরামর্শ তাকে কে দিয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ অর্থ সরবরাহ করে থাকলেও তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও তার এ অপরাধ সংঘটনের মোটিভ কি ছিল এবং এর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, সংগঠন কিংবা গোষ্ঠী জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ইকবাল হোসেন কুমিল্লা নগরীর পার্শ্ববর্তী দারোগা বাড়ি মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ সংগ্রহ করে নানুয়ারদীঘির পাড় পূজামণ্ডপে রাখেন। বিষয়টি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়। বুধবার রাত থেকে গণমাধ্যমে ইকবাল হোসেনের নাম আসায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকত থেকে নোয়াখালীর ৩ ছাত্রলীগ কর্মীর সহায়তায় পুলিশ ইকবালকে আটক করে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিার রাতেই তাকে আনতে কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কক্সবাজারে যায়। শুক্রবার দুপুরে কড়া পুলিশ প্রহরায় তাকে কুমিল্লায় আনা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৩ই অক্টোবর নগরীর নানুয়া দীঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ২টি এবং দাউদকান্দি ও দেবিদ্বার থানায় একটি করে মোট ৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় শনিবার পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নগরীর মনোহরপুর কালিবাড়ির পূজামণ্ডপে হামলার সময় ইটের আঘাতে গুরুতর আহত দিলীপ কুমার দাস (৫৮) নামের ব্যক্তি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এদিকে দিলীপ কুমারের মৃত্যু এবং মণ্ডপে হামলার ঘটনায় শনিবারও নগরীতে বিক্ষোভ করেছে ও গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলার নেতৃবৃন্দ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর