× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চালের দাম লাগামহীন

প্রথম পাতা

আলতাফ হোসাইন
২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার

সরকারি হিসেবে দেশে চালের কোনো সংকট ছিল না। তবুও বছরজুড়েই দফায় দফায় পণ্যটির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতা সাধারণের। দাম না বাড়াতে মিল মালিকদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে দাম নিয়ন্ত্রণে কয়েক দফা চাল আমদানির সিদ্ধান্তও দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ গত অক্টোবরে শুল্কহার কমিয়ে ৭ দফায় ৪২৮ প্রতিষ্ঠানকে ১৭ লাখ ২ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। গত সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আমদানি করা সব চাল বাজারজাতকরণের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল আমদানিকারকদের। এতকিছুর পরও দাম তো কমেইনি, বরং আরও ঊর্ধ্বমুখী দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের বাজার।
সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও কেন কমছে না চালের দাম? এমন প্রশ্ন যখন সাধারণ ক্রেতাদের, তখন কৃষিমন্ত্রী জানালেন ভিন্ন তথ্য।
গত রোববার এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। কিন্তু দেশের মানুষ ভাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল বলে চালের ঘাটতি পড়েছে। একই কারণে দামও বাড়ছে।
সোমবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নতুন করে আরও বাড়ছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সরু ও মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
সোমবার সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সরু চাল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি আকারের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে। খুচরা বাজারে সরু চাল মান ভেদে প্রতিকেজি ৫৬ থেকে ৬৮ এবং মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল সরু চাল ৫৫ থেকে ৬৬ এবং মাঝারি চাল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। তবে নতুন করে মোটা চালের দাম বাড়েনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০ সালে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৩ হাজার ৯২৭ টন। তার আগের অর্থবছর ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার টনের কিছুটা বেশি। সংস্থাটি বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর চালের উৎপাদন ছিল প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টন। গত অর্থবছর বোরোতে চালের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টন। অন্যদিকে আমনে চালের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ টন ও আউশে ২৭ লাখ ৫৫ হাজার টন। দেশের উৎপাদিত চালের ৫৫ শতাংশের বেশি আসে বোরো ধান থেকে, বাকিটা আউশ ও আমন থেকে। চলতি বোরো মৌসুমেও চালের ভালো ফলন হয়েছে। সেই হিসেবে দেশে চালের সংকট থাকার কথা নয়।
দাম বৃদ্ধির জন্য বরাবরই মিল মালিকদের দোষারোপ করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সরকারও মিল মালিকদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়ে থাকেন। এরপরও শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবুও কেন ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার? কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, বাজারমূল্যের সঙ্গে আমদানির খরচ সঙ্গতিপূর্ণ না হলে চালের দাম কমবে না। তিনি মানবজমিনকে জানান, সরকার থেকে শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি দেখা যায়, প্রাইজ এবং ট্যাক্স অনুযায়ী যে দাম আসে সেটা স্থানীয় বাজারের কাছাকাছি, তাহলে দাম কমবে না। এ অবস্থায় যদি চালের দাম কমাতে হয় তাহলে শুল্ক আরও কমাতে হবে বলে মত দেন তিনি। ক্যাব সভাপতি বলেন, দেখতে হবে শুল্ক, ক্রয়মূল্য দুইটা মিলে আমদানিকারকদের খরচ কেমন পড়ছে। ধরুন, যদি দেখা যায় আমদানিকারকদের কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে ৪৫ কিংবা ৪৭ টাকা, তাহলে তো সে বিক্রি করবে ৫০ টাকা। তখন বাজারমূল্য হয়ে যাবে ৫৫ টাকা। এখন সরকার যদি সত্যিই সাধারণ মানুষের জন্য চালের দাম কমাতে চায়, তাহলে ওএমএসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সরকারের যেসব সামাজিক কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে পর্যাপ্ত চাল বিতরণ করতে হবে। এটি করা হলে যারা অতি মুনাফা করতে চায় তাদের পক্ষে চাল ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তখন দামও কমবে। সেজন্য টিসিবি সহ সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে বিতরণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর