২২ বছর হয়ে গেলো! তবুও মনে হয় এইতো সেদিন। স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ছেড়ে দিলেন হার্শেল গিবস। ‘নিষ্ঠুর’ ওয়াহ গিবসকে ডেকে বললেন, বিশ্বকাপটাই হাত থেকে ফেলে দিলা! হঠাৎ ওয়াহ-গিবসের কথা কেন মনে এলো? বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে লিটন দাসের দুটি ক্যাচ মিসের হাহাকার যে এখনও শেষ হচ্ছে না।
এমনিতে যে যাই বলুন না কেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলটি কাগজে-কলমে তেমন বড় কোনো শক্তি নয়। গতকাল আফগানিস্তানের খেলা যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয় বিষয়টি খেয়াল করেছেন। যুদ্ধক্লান্ত দেশ। রাষ্ট্রক্ষমতা বদল হয়েছে অন্যরকমভাবে। অনিশ্চিত জীবন। সরকারের নেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
বিশ্বকাপে খেলা যাবে কি যাবে না তা নিয়েও কথা হয়েছে অনেক। হঠাৎই অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সব কিছু ভুলে আফগান ব্যাটাররা যেভাবে কাল গ্যালারিতে বল পাঠাচ্ছিলেন তাতে বিস্মিত না হয়ে উপায় কি? মাঝে-মধ্যে তো মনে হচ্ছিল গেইল-পোলার্ডই বুঝি ব্যাটিং করছেন।
বাংলাদেশ দলে এমন পাওয়ার হিটার নেই তা আগে থেকেই জানা। কোহলি বা উইলিয়ামসনের মতো শিল্পীই বা কোথায়? কিংবা বাবর, রিজওয়ানের মতো ক্যালকুলেটিভ খেলোয়াড়। তাই বলে আমাদের কিছুই নেই তাতো নয়। ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায় এরইমধ্যে নাম উঠে গেছে সাকিব আল হাসানের। মোস্তাফিজের মতো বোলার রয়েছেন আমাদের। খুব বড় রানের ম্যাচ না হলে বরাবরই আমাদের সুযোগ থাকবে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যে সুযোগটা পেয়েছিলাম আমরা। লিটন দু’টি ক্যাচ না ছাড়লে হয়তো আমরা জিতেই যেতাম। কিংবা অধিনায়কের কিছু সিদ্ধান্ত যদি অন্যরকম হতো তাহলেও হয়তো ম্যাচের ফল ভিন্ন হতো। কিন্তু কী করলে কী হতো তা নিয়ে তো আর জীবন থেমে থাকে না। বাংলাদেশের বিশ্বকাপও যেমন শেষ হয়ে যায়নি।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ কোনটি? আপনি ক্রিকেটের টুকটাক খবর রাখলেও তা জানেন। নিউইয়র্ক টাইমস এ খেলার আগে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যেখানে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ প্রসঙ্গে বলা হয়, ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা নয়। আসলেই তো এই ম্যাচে রাজনীতি, আবেগ, উন্মাদনা ভর করেছিল সবকিছুই। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হয়েছে একপেশে। ইতিহাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভারতের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সাবেক কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম যেমন বলেছেন, নিজের জীবনে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছে পাকিস্তান তা দেখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ম্যাচ শেষে অসাধারণ সুন্দর কিছু ছবি তৈরি হয়েছে। বিরাট কোহলি যেভাবে রিজওয়ানকে বুকে টেনে নিয়েছেন ক্রিকেটে তা অমর সৌহার্দ্যের ছবি হিসেবে থেকে যাবে বহুদিন। কিংবা ম্যাচ শেষে ধোনি যেভাবে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে গল্পে মেতেছেনে তার সৌন্দর্যওবা কম কিসে।
যুদ্ধ, হানাহানি শত্রুতা নয়, খেলার সৌন্দর্য উপভোগ করুন। বিরাট কোহলিতো ঠিকই বলেছেন, সবার উপরে ক্রিকেট।