× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইইউর সঙ্গে বৈঠকে ডিজিটাল অ্যাক্টের অপব্যবহারে উদ্বেগ, গণতান্ত্রিক শাসন নিশ্চিতে সম্মত বাংলাদেশ

অনলাইন

কূটনৈতিক রিপোর্টার
(২ বছর আগে) অক্টোবর ২৭, ২০২১, বুধবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুরক্ষাকে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের মূল্যবোধ বা স্তম্ভমূল বলে পুনরুল্লেখ করা হয়েছে সদ্য সমাপ্ত ব্রাসেলস বৈঠকে। ২৬শে অক্টোবর দিনভর অনুষ্ঠিত চতুর্থ কূটনৈতিক সংলাপের সমাপনীতে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে সেই মূল্যবোধের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের প্রায় সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যহারের বিষয়টি উত্থাপন করে ইইউ প্রতিনিধিরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই অ্যাক্টের কিছু বিধান ডিজিটাল অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিবৃত উদ্দেশ্যের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে জানিয়ে এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে করা মামলাগুলোর চলমান বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখার তাগিদ দেয়া হয়। ওই সব মামলার বিষয়ে বিশদভাবে অনুসন্ধানেও জোর দেয় ইইউ। যৌথ বিবৃতি মতে, বাংলাদেশ সরকারের তরফে জমা দেয়া মানবাধিকার বিষয়ক সার্বজনীন পর্যালোচনা বা ইউপিআর রিপোর্টে প্রণীত সুপারিশ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে উৎসাহিত করে ইউরোপের ২৭ রাষ্ট্রের ওই জোট। সদ্য সমাপ্ত ব্রাসেলস বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইউপিআর রিপোর্টের আপডেট জানানো এবং এক্ষেত্রে পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গিও শেয়ার করা হয়।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষই কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। উভয়ে যে কোনো জায়গায়, যে কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িক সংঘাত, সহিংসতা এবং বৈষম্যের নিন্দা করেছে। ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা এভরিথিং বাট আর্মস বা ইবিএ-র গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী হিসেবে বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্যের জন্য প্রশংসা করেছে ইইউ। এই প্রেক্ষাপটে, ইইউ বাংলাদেশের শ্রম খাতে তার জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ ও প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে। বৈঠকে নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী এর ব্যাপক বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে নিরাপদ ও সবুজ কারখানার বিনিয়োগে এটা জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের ঘাড়ে জগদ্দল পাথর হিসেবে চেপে বসা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। চার বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে অব্যাহতভাবে আতিথেয়তা প্রদানের জন্য ইইউ বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের উদার ভূমিকা ও পদক্ষেপের প্রশংসার পুনরাবৃত্তি করেছে। চরম ওই সঙ্কটে ইইউ যে রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান করছে এ জন্য ঢাকার তরফে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে প্রয়োজনীয়তা পদক্ষেপে পরস্পরকে সহায়তার নিশ্চয়তা দেন। বাস্তুচ্যুত ওই মিয়ানমার নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয় যতটা সম্ভব সুখকর করতে কিছু লোককে ভাসানচরে স্থানান্তর এবং তাদের জীবন-মান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর মধ্যে সম্প্রতি সই হওয়া সমঝোতা স্মারককে স্বাগত জানায় ইইউ। এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বৃহত্তর তরুণ জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে শিক্ষা, উন্নত জীবিকা এবং তাদের ভবিষ্যতের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইইউর দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় অভিন্ন।

ভিসা এবং অনিয়মিত বাংলাদেশি ফেরত প্রসঙ্গ-
ব্রাসেলসের বৈঠকে অবৈধ বা অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরানোর বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বিবৃতি বলা হয়, ভিসা কোডের অনুচ্ছেদ ২৫-এ এর অধীনে চলমান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে ইউরোপে থাকার অনুমতি নেই এমন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। তাদের নিজ দেশে ফেরানো সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজিউর- এসওপি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি প্রদর্শন করেছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং মামলার ব্যাকলগ ক্লিয়ার করা এবং নির্ধারিত এসওপির বাস্তবায়নে পদক্ষেপ দৃশ্যমান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করার পাশাপাশি দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মশক্তির জন্য ইইউতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অভিবাসনের আইনি পথ প্রশস্ত করার সুযোগ অবারিত করার অনুরোধ করেছে। বৈঠকে ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার জন্য তার নতুন কৌশল উপস্থাপন করে। উভয় পক্ষ মিয়ানমার ও আফগানিস্তানসহ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সেইসাথে জাতিসংঘের ফোরামে সন্ত্রাস দমন ও সহযোগিতা পরস্পরের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। দু'পক্ষ এ ক্ষেত্রে অভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়- ব্রাসেলস বৈঠকে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি এবং ডেলিভারেবল পর্যায়ে পৌঁছানোর টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালে ঢাকায় পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক গুনার উইগ্যান্ড এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সেক্রেটারি ) অ্যাম্বাসেডর মাসুদ বিন মোমেন। বিবৃতি মতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর পটভূমিতে গঠনমূলক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ব্রাসেলস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উভয়পক্ষই চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হওয়ার বিষয়টি নোটে নেন এবং ক্রমউন্নতির এই ধারাকে স্বাগত জানান। বৈঠকে বাণিজ্য, অভিবাসন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা মানবিক সংকট এবং উন্নয়ন সহযোগিতার বর্তমান অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলোর বাইরে ইইউ-বাংলাদেশের সম্পৃক্ততাকে আরও বিস্তৃত করার পথ নকশা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। ইইউ এবং বাংলাদেশ ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার জন্য ইইউ কৌশলকে বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু কর্ম, ডিজিটালাইজেশন, সংযোগ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এই বিষয়ে, উভয় পক্ষ কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান এবং বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতির সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একটি নিয়মিত রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। কোভিডের প্রভাব বিশেষত পোস্ট-কোভিড মোকাবিলা বিষয়ে আলোচনা হয়। টিম ইউরোপ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলা তথা পুনরুদ্ধারের জন্য ৩৩৪ মিলিয়ন সংগ্রহ করেছে যার লক্ষ্য উল্লেখযোগ্যভাবে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষা। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম প্রদান এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানায় বাংলাদেশ। ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো আলাদাভাবে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১০ লাখ ডোজ টিকা প্রদানের জন্যও ঢাকার তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্রাসেলস বৈঠকে করোনা টিকার বৈশ্বিক সহজলভ্যতা বিশেষত নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য টিকার প্রাপ্তি এবং উৎপাদন সহজীকরণের তাগিদ দেয়া হয়। প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফাইন্যান্স সামিটে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করে ইইউ। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে ইইউর দৃষ্টিভঙ্গিসহ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে আঞ্চলিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় এবং অগ্রাধিকারগুলোর বিষয়ে কথা হয়েছে। উভয় পক্ষই প্যারিস চুক্তির অধীনে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের গুরুত্ব এবং প্রশমনের পাশাপাশি অভিযোজনের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল জোগাড় করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশে গ্রিণ এনার্জির বিকাশে ইইউর অংশীদারিত্ব নিয়েও কথা হয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় জলবায়ু সংলাপে বিশদভাবে এ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ আছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর